আঞ্চলিক

পুরান ঢাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল এসএসসি পরীক্ষার্থীর

রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয় এসএসসি পরীক্ষার্থী মোরশেদ আলম তানিম (১৮)। হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বুধবার ভোরে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এলাকায় শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

জীবনের স্বপ্ন ও সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে চলা এক তরুণ শিক্ষার্থী মাত্র একটি মোবাইল ও মানিব্যাগ রক্ষার চেষ্টা করতে গিয়ে হারিয়ে ফেললো তার প্রাণ।

ঘটনাটির বিস্তারিত:

ঘটনাটি ঘটে সোমবার (৩০ জুন) রাত আনুমানিক ১১টার দিকে। তানিম তার নিকটাত্মীয়ের বাসা থেকে নিজ বাসায় ফেরার পথে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের মাকুশাহ মাজারের কাছে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, দুই অজ্ঞাত ছিনতাইকারী তানিমের পথরোধ করে তার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। তানিম বাধা দিলে তার পেটে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় তারা।

সাথে থাকা বন্ধুরা কিছুদূর সামনে থাকায় সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানাতে না পারলেও পরে পথচারীদের সহযোগিতায় তাকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

তানিম কে ছিলেন?

মোরশেদ আলম তানিম লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার বামনী গ্রামের ফিরোজ আলম আমিরের ছেলে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তানিম ছিলেন সবার বড়।

পুরান ঢাকার বংশালের নুর বক্স লেনে নানির বাসায় থেকে পড়াশোনা করছিলেন তিনি। এবছর পুরান ঢাকার আহমেদ বাওয়ানী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।

তানিমের বাবার কথায়, “সে খুবই মেধাবী ও ভদ্র ছিল। তার অনেক স্বপ্ন ছিল। এখন সব শেষ হয়ে গেলো।”

চিকিৎসার সময় ও মৃত্যু:

প্রথমে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হলেও মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকালে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন তানিম।

তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (২ জুলাই) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

চিকিৎসকরা জানান, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ ও সংক্রমণের কারণে অবস্থা দ্রুত অবনতি ঘটে।

তদন্ত ও পুলিশি পদক্ষেপ:

চকবাজার থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) মানিক উদ্দিন জানান, “আমরা প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছি। মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।”

তিনি আরও বলেন, “ঘটনাস্থলের আশেপাশে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।”

পুরান ঢাকায় ছিনতাইয়ের বাড়বাড়ন্ত:

পুরান ঢাকা এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরেই ছিনতাইকারী চক্রের দখলে রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

বিশেষ করে নাজিমউদ্দিন রোড, বংশাল এলাকা ও মাজারসংলগ্ন রাস্তাগুলোতে রাতের বেলায় পথচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।

স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, “প্রায়ই এখানে মোবাইল ছিনতাই হয়। কিন্তু পুলিশ চোখ বন্ধ করে থাকে। এবার এক ছেলের প্রাণ গেলো, এখন পুলিশ নড়েচড়ে বসেছে।”

সমাজের প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ:

তানিমের মৃত্যুর পর তার বন্ধু, পরিবার ও এলাকাবাসী দারুণভাবে ক্ষুব্ধ। সামাজিক মাধ্যমে ‘জাস্টিস ফর তানিম’ হ্যাশট্যাগে প্রতিবাদের ঝড় বইছে।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন।

একজন স্থানীয় শিক্ষক বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থীরা যদি নিরাপদে চলাচল করতে না পারে, তাহলে কেমন সমাজ গড়ছি আমরা?”

শেষকথা 

তানিমের মৃত্যু যেন আরেকটি পরিসংখ্যান হয়ে না যায়। অপ্রতিরোধ্য ছিনতাই, দুর্বল আইন প্রয়োগ ও নজরদারির অভাব আমাদের প্রতিদিন মূল্য চোকাতে বাধ্য করছে।

এবার হয়তো প্রশ্ন তোলা দরকার—ছিনতাইকারীর হাতে কত প্রাণ গেলে বদলাবে এই শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা?

এম আর এম – ০১৪০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button