আঞ্চলিক

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস বন্ধ, কমিশনার সাময়িক বরখাস্ত

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ জাকির হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত ২৮ ও ২৯ জুন দুইদিন ধরে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস বন্ধ রাখার কারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। এই কারণে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

দুইদিনের শাটডাউনের পেছনের কারণ ও প্রভাব

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন বিভিন্ন শুল্ক-কর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজস্ব খাতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ২৮ ও ২৯ জুন কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করে। এই কর্মসূচির ফলে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসসহ দেশের সব শুল্ক-কর অফিস বন্ধ থাকে এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বিপর্যস্ত হয়।

শাটডাউনের ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় ব্যাহত হয়, যা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস দেশের সবচেয়ে বড় রাজস্ব আদায়কেন্দ্র, যেখানে গত অর্থবছরে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা আদায় হয়েছে।

সাময়িক বরখাস্তের আদেশ ও তার প্রভাব

গত মঙ্গলবার রাতেই আইআরডি সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের স্বাক্ষরে মো. জাকির হোসেনকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়। আদেশে উল্লেখ করা হয়, দপ্তর খোলা রাখার সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস বন্ধ রাখায়, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রেখে সরকারের বিপুল রাজস্ব ক্ষতি করায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

বরখাস্তকালে মো. জাকির হোসেন যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা পাবেন। পাশাপাশি, তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা অনুসারে তদন্ত করা হবে এবং তদন্ত শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

নতুন কমিশনারের দায়িত্ব গ্রহণ

বরখাস্তের পর, চট্টগ্রামের কাস্টমস বন্ড কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিনকে নতুন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণ করে দপ্তরের কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে উদ্যোগ নেবেন বলে জানা গেছে।

এনবিআরে দুর্নীতি ও সংস্কার আন্দোলন

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের এই ঘটনার পেছনে এনবিআরের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত ও সংস্কার আন্দোলনও একটি বড় ভূমিকা রেখেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বর্তমানে এনবিআরের ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে, যার মধ্যে দুজন সদস্য এবং এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদারও রয়েছেন।

এই দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে শুল্ক-কর কর্মকর্তারা রাজস্ব খাতের সুষ্ঠু সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছেন। তাঁদের দাবি ছিল, অধিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং শুল্ক ব্যবস্থায় দূর্নীতিমুক্তি জরুরি।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস: দেশের অর্থনীতিতে অপরিহার্য ভূমিকা

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস দেশের সবচেয়ে বড় কাস্টমস অফিস হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আদায় ব্যবস্থায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এখানে সারা দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রায় ৬০% কাজ সম্পন্ন হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এখানে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করা হয়েছে, যা সরকারের আয় সংস্থানের প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচিত।

শাটডাউনের কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র বন্ধ থাকায়, দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হন। পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক চেইনেও প্রভাব পড়েছে।

রাজস্ব খাতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিরা নিয়মিতই বলেন, রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থায় সংস্কার ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সরকারের আয় বৃদ্ধি সম্ভব নয়। শুল্ক-কর ব্যবস্থার জটিলতা ও দুর্নীতি রোধে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এবারের আন্দোলন ও সাময়িক বরখাস্ত ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীতে এনবিআর ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো আরও কঠোর ও সুষ্ঠু সংস্কার পদ্ধতি গ্রহণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সামগ্রিক পরিস্থিতির সংক্ষিপ্ত সারাংশ

  • চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. জাকির হোসেন ২৮ ও ২৯ জুন অফিস বন্ধ রাখায় সাময়িক বরখাস্ত।
  • রাজস্ব খাতে যৌক্তিক সংস্কার দাবিতে এনবিআর কর্মকর্তাদের শাটডাউন আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত।
  • আইআরডি ও এনবিআরের উদ্যোগে বরখাস্ত আদেশ এবং নতুন কমিশনার নিয়োগ।
  • দুর্নীতি দমন কমিশনের এনবিআর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
  • চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের অর্থনৈতিক গুরুত্ব দেশের রাজস্ব আদায়ের মূল কেন্দ্র হিসেবে।
মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button