জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের স্ত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

রাঙামাটি শহরের আলম ডকইয়ার্ড এলাকার একটি ফ্ল্যাটে রহস্যজনকভাবে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেল মুহাইমিনা ইসলাম উর্মির মরদেহ। তিনি ছিলেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রায়হান চৌধুরীর স্ত্রী। প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হলেও, পুলিশ এখনো নিশ্চিত নয় এটি আত্মহত্যা না কি অন্য কিছু।
কী ঘটেছিল সেই বিকেলে?
মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাঙামাটি শহরের ব্যস্ততম এলাকা আলম ডকইয়ার্ডের সাফা টাওয়ারের ছয়তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় মুহাইমিনা ইসলাম উর্মির (বয়স আনুমানিক ২৯-৩০) ঝুলন্ত মরদেহ।
নিহত উর্মি ছিলেন রাঙামাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রায়হান চৌধুরীর স্ত্রী। ঘটনার সময় তিনি তার স্বামী, দুই সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে একই ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন।
পুলিশ জানিয়েছে, বিকেলের দিকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বিশ্রামে ছিলেন। এ সময় হঠাৎ করে একটি কক্ষ থেকে সাড়া না পেয়ে কক্ষে প্রবেশ করলে দেখা যায়, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় উর্মির দেহ ঝুলছে।
প্রাথমিক তদন্ত ও পুলিশের বক্তব্য
ঘটনার পরপরই খবর পেয়ে রাঙামাটি কোতোয়ালি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। মরদেহ উদ্ধারের পাশাপাশি আলামত সংগ্রহ করে পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাহেদ উদ্দিন বলেন,
“সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় মহিলার দেহ পাওয়া গেছে। এটি আত্মহত্যা হতে পারে, তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রয়োজন।”
মরদেহটি বর্তমানে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। সেখানে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে রিপোর্টের ভিত্তিতে।
দাম্পত্য কলহ? আত্মহত্যার সম্ভাব্য কারণ
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে। যদিও বিষয়টি নিয়ে পরিবারের কেউ এখনো প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি।
পুলিশ বলছে, পারিবারিক সমস্যার কারণে মানসিক চাপে থেকে উর্মি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি।
নিখুঁত পরিবারে হঠাৎ এমন ঘটনা!
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রায়হান চৌধুরী একজন পেশাদার ও দায়িত্বশীল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পরিচিত। তার স্ত্রী উর্মি দুই সন্তানের জননী। এলাকাবাসীর ভাষ্য মতে, পরিবারটি ছিল ভদ্র, শিক্ষিত ও সম্পর্কভিত্তিকভাবে সুসংগঠিত।
তবে এই ঘটনার পর থেকে বিষয়টি ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। স্থানীয়ভাবে আলোচনা চলছে—আসলেই কি এটি আত্মহত্যা, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য কোনো রহস্য?
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও স্থানীয় জনমত
এমন একটি প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যের আত্মহত্যা নিয়ে রাঙামাটি শহরজুড়ে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ঘটনাটি নিয়ে চলছে আলোচনা। কেউ বলছেন, এটি আত্মহত্যা নয়, অন্য কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।
অন্যদিকে অনেকে বলছেন, মানসিক স্বাস্থ্য ও দাম্পত্য সমস্যা নিয়ে আরও সচেতন হওয়া দরকার। কারণ সমাজে এ ধরনের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে।
আইনি অগ্রগতি: মামলা হয়নি, তদন্ত চলছে
ঘটনাটি ঘটেছে এমন একটি পরিবারের মধ্যে, যার সঙ্গে সরাসরি বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট। ফলে পুলিশ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
ওসি সাহেদ উদ্দিন বলেন,
“আমরা ঘটনাটিকে গুরুত্বসহকারে দেখছি। এখনো পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি, তবে প্রয়োজন হলে মামলা নেওয়া হবে।”
মনোবিজ্ঞানী কী বলছেন?
একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন,
“দাম্পত্য কলহ, মানসিক চাপ এবং পারিবারিক অবহেলার ফলে অনেক নারী একসময় আত্মহত্যার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। এটা সামাজিক ও মানসিক সমস্যার সম্মিলিত প্রতিফলন।”
তিনি আরও বলেন, এই ধরনের ঘটনার পর শুধু তদন্ত নয়, বরং পরিবার ও সমাজের উচিত এই বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা শুরু করা।
আত্মহত্যা না অন্য কিছু—জানাবে তদন্তই
মুহাইমিনা ইসলাম উর্মির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্ন। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলা হলেও, তদন্তের আগ পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।
তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে — একজন বিচারক স্ত্রীর এমন করুণ পরিণতির পেছনে আসলেই কি কেবল দাম্পত্য কলহ, নাকি আছে আরও অজানা কারণ?
এম আর এম – ০১৩২, Signalbd.com