আঞ্চলিক

মগবাজারে ৩ মৃত্যু: স্বজন রফিকুল ২ দিনের রিমান্ড

ঢাকার মগবাজারে আবাসিক হোটেলে স্ত্রী-সন্তানসহ সৌদি প্রবাসীর মৃত্যু নিয়ে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য। বিষক্রিয়ায় মৃত্যু নাকি পরিকল্পিত হত্যা—তা নিয়ে প্রশ্ন ঘুরছে জনমনে। ঘটনায় সংশ্লিষ্ট স্বজন রফিকুল ইসলামকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

হোটেলে তিনজনের মৃত্যু

ঢাকার মগবাজারের একটি আবাসিক হোটেলে স্ত্রী ও সন্তানসহ সৌদি প্রবাসী মনির হোসেনের আকস্মিক মৃত্যু দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছে। গত রোববার বিকেলে মগবাজারের ‘সুইট স্লিপ’ হোটেল থেকে আদ-দ্বীন হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মনির হোসেন (৪৮), তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার স্বপ্না (৩৮) এবং ছেলে আরাফাত হোসেনকে (১৮) মৃত ঘোষণা করেন।

তিনজনের মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে সন্দেহের দানা বাঁধে, যা পরে একটি হত্যা মামলায় রূপ নেয়।

রিমান্ডে নেওয়া হলো আত্মীয় রফিকুলকে

ঘটনার জেরে মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শুনানি শেষে মনির হোসেনের আত্মীয় রফিকুল ইসলামকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক মাহবুব আলম। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার এসআই জালাল উদ্দিন আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। তবে বিচারক প্রথম ধাপে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রফিকুল ইসলাম হচ্ছেন মনির হোসেনের চাচাতো চাচা। জানা গেছে, কেরানীগঞ্জে মনির হোসেনের দুটি বাড়ির দেখভাল করতেন তিনিই।

পরিবারের অভিযোগ: সম্পত্তির বিরোধ থেকে হত্যাকাণ্ড?

মৃত মনির হোসেনের ভাই নুরুল আমিন রমনা থানায় দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করেন, দেশে আসার পর মনির হোসেন ও রফিকুল ইসলামের মধ্যে জমি ও টাকার হিসাব নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। বাদীর দাবি, পরিকল্পিতভাবে বিষক্রিয়া যুক্ত খাবার খাইয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।

এজাহারে উল্লেখ রয়েছে, ঈদের আগে মনির দেশে ফেরার পর ২৮ জুন স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। নিউ ইস্কাটনের একটি হাসপাতালে ছেলের চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণে তারা রাজধানীতে অবস্থান করছিলেন। চিকিৎসকের সিরিয়াল না পেয়ে পরিবারটি মগবাজারের ‘সুইট স্লিপ’ হোটেলে ওঠে।

রহস্যময় খাবার: ঘটনার রাতেই খাবার এনেছিলেন রফিকুল

ঘটনার দিন বিকেলে রফিকুল ইসলাম ‘ভর্তা ভাত’ নামের একটি হোটেল থেকে খাবার নিয়ে মনির হোসেনের রুমে যান। সন্ধ্যার পরপরই স্ত্রী-সন্তানসহ মনির সেই খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। মধ্যরাতেই তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাদের মৃত ঘোষণা করা হয়।

রফিকুল দাবি করেছেন, “মনির ভাই নিজেই বলেন খাবার আনতে। আমি শুঁটকি, আলু ভর্তা, মুরগির রেজালা, ভাত এনে দিই। পরে আমরা দু’জন হোটেলের নান-শিক কাবাব আর ফালুদাও খাই।” তার ভাষ্যমতে, তিনিও সেই খাবার খেয়েছেন, এবং এ ঘটনায় তিনিও মর্মাহত।

আদালতে রফিকুলের বক্তব্য: ‘টাকার লোভ ছিল না’

রফিকুল ইসলামের আইনজীবী আদালতে বলেন, “তার হাতে লাখ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। সম্পত্তির লোভ তার ছিল না। ঘটনার পর থেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।” তিনি আরও জানান, রফিকুল দু’বার স্ট্রোক করেছিলেন এবং বর্তমানে অসুস্থ। রিমান্ডের পরিবর্তে জামিন প্রার্থনা করেন তিনি।

তবে বিচারক এই যুক্তি খণ্ডন করে বলেন, “একজন অসুস্থ হতে পারে, কিন্তু পুরো পরিবার মারা গেল!” আদালত এটিকে চাঞ্চল্যকর ঘটনা আখ্যা দিয়ে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক প্রতিবেদন কি বলছে?

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নিহতদের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রাথমিকভাবে বিষক্রিয়াজনিত মৃত্যুর আলামত পাওয়া গেছে। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ, খাবারের উৎস ও রাসায়নিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিস্তারিত জানা যাবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ।

পরবর্তী পদক্ষেপ: তদন্ত জোরদার

রিমান্ডে থাকা রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে তথ্য বের করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, এখনই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাচ্ছে না। তবে এটি হত্যা না দুর্ঘটনা — তা খোলাসা হবে ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে এলে।

এদিকে নিহতদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে চলছে শোকের মাতম। পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি, প্রকৃত দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।

রহস্যের জট খুলবে কি?

এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার পেছনে কী সত্য? একটি পুরো পরিবার বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও রফিকুল ইসলামকে ঘিরে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। রিমান্ডে থাকা রফিকুল কী স্বীকারোক্তিমূলক কিছু বলবেন, নাকি তদন্তে বেরিয়ে আসবে নতুন চমক?

বিশ্লেষকদের মতে, এখন সবার চোখ পুলিশের তদন্তের ফলাফলের দিকে।

এম আর এম – ০১৩১, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button