আঞ্চলিক

বিজয় সরণিতে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

রাজধানীর বিজয় সরণি এলাকায় গভীর রাতে একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে সংঘর্ষে দুটি মোটরসাইকেল আরোহী প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের পরিচয় এখনো অজ্ঞাত থাকলেও, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনাস্থলের বিস্তারিত

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার দিকে বিজয় সরণির প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে একটি দ্রুতগামী মাইক্রোবাসের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। সংঘর্ষটি এতটাই প্রচণ্ড ছিল যে মোটরসাইকেলটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং দুই আরোহী সড়কের ওপর ছিটকে পড়ে।

তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আহত দুইজনকে উদ্ধার করে। একজনকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতদের পরিচয় ও পোশাক বিবরণ

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত দুই যুবকের কেউই হেলমেট পরিহিত ছিলেন না। দুজনের পরনে ছিল হাফ প্যান্ট ও গেঞ্জি। তাদের বয়স আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত তাদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মরদেহ দুটি সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে এবং পরিচয় শনাক্তে কাজ চলছে।

এলাকা ও থানার অবস্থান 

ঘটনাটি মূলত কাফরুল থানা এলাকার মধ্যে পড়েছে। যদিও প্রথমে তেজগাঁও থানা পুলিশের একজন উপপরিদর্শক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং দুর্ঘটনাটি দেখে দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। পরবর্তীতে, দুর্ঘটনার তদন্ত ও আইনানুগ প্রক্রিয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করে কাফরুল থানা পুলিশ।

এ বিষয়ে কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়েছে এবং চালককে শনাক্তের চেষ্টা চলছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, বেপরোয়া গতিই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।”

প্রেক্ষাপট 

রাজধানীতে রাতের বেলা মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষের ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও বিজয় সরণি ও তেজগাঁও অঞ্চলে এমন দুর্ঘটনার নজির রয়েছে। বিশেষ করে রাতের নিরব রাস্তায় বেপরোয়া গতির ফলে প্রায়ই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

গত মাসেও এই এলাকায় একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক তরুণ নিহত হন, যার মাথায় হেলমেট ছিল না। বারবার এমন দুর্ঘটনার পরও সাধারণ মানুষ এবং চালকদের মাঝে সচেতনতার অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও নিরাপত্তা প্রশ্ন

এই দুর্ঘটনার খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, কেন রাতে পুলিশের নজরদারি কম থাকে এবং কেন চালকেরা এত বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। আবার অনেকে মোটরসাইকেল চালকদের হেলমেট ব্যবহার না করাকে দায়ী করছেন।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের একজন সদস্য বলেন, “হেলমেটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক হলেও অনেকেই তা মানছেন না। এই উদাসীনতা প্রাণঘাতী হতে পারে—এটাই তার প্রমাণ।”

বিশেষজ্ঞ মতামত 

ট্রাফিক বিশেষজ্ঞ মো. নাজমুল হাসান বলেন, “রাতের সড়কে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর প্রবণতা বাড়ছে। এর পেছনে আইন প্রয়োগের দুর্বলতা, সিসিটিভি মনিটরিংয়ের অভাব এবং জনসচেতনতার ঘাটতি রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “বিশেষ করে তরুণদের মাঝে হেলমেট ব্যবহার না করা এবং বেপরোয়া বাইক চালানোর প্রবণতা গভীর উদ্বেগজনক।”

সারসংক্ষেপঃ  

বিজয় সরণির দুর্ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো, সড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর। রাতের রাজধানীতে বেপরোয়া চালকদের লাগাম টানতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনগণ—দু’পক্ষকেই আরও সচেতন হতে হবে।

তবে প্রশ্ন থেকেই যায়: কবে সচেতন হবে চালকরা? আর কত প্রাণ গেলে থামবে এই দুর্ঘটনা?

এম আর এম – ০০৯৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button