আঞ্চলিক

ভারতে পাচারের সময় ৫০০ কেজি শিং মাছসহ মাইক্রোবাস জব্দ 

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ভারতে পাচারের জন্য আনা ৫০০ কেজি শিং মাছসহ একটি মাইক্রোবাস জব্দ করেছে। শনিবার (২৮ জুন) ভোররাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার খারেরা বিওপি ক্যাম্পের আওতাধীন বেলবাড়ি সীমান্ত এলাকার মেইন পিলার-২০৩ এর নিকটবর্তী স্থান থেকে এসব মাছ জব্দ করা হয়।

তবে অভিযানের সময় চোরাচালানকারী চক্রের সদস্যরা বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়। ফলে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান

বিজিবি সূত্রে জানা যায়, সীমান্ত এলাকায় মাছ পাচার হওয়ার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খারেরা বিওপির টহল দল ওই এলাকায় অভিযানে নামে। তারা দেখতে পান একটি মাইক্রোবাস সীমান্তের দিকে সন্দেহজনকভাবে অগ্রসর হচ্ছে। বিজিবি সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে মাইক্রোবাসটিকে থামার জন্য সংকেত দিলে চালক ও তার সঙ্গে থাকা পাচারকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে মাইক্রোবাস তল্লাশি করে সেখানে থাকা মোট ৫০০ কেজি শিং মাছ জব্দ করা হয়।

বিজিবি ৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জিয়াউর রহমান বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের টহল দল বেলবাড়ি সীমান্তে অভিযানে যায় এবং একটি মাইক্রোবাসে লুকানো অবস্থায় ৫০০ কেজি শিং মাছ জব্দ করে। পাচারকারীরা অন্ধকারে সীমান্তের গহিন জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যায়।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের সদস্যরা রাত-দিন নিরলসভাবে সীমান্তে নজরদারি করছে। যেকোনো ধরনের চোরাচালান প্রতিরোধে আমরা সর্বদা সতর্ক। এই মাছগুলো কাস্টমসের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী নিলামে বিক্রি করা হয়েছে।”

মাছ পাচারের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা

সম্প্রতি দেশে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকে ভারতে বিভিন্ন সামগ্রী পাচারের প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এর মধ্যে শিং মাছ, চিতল, গলদা চিংড়ি ও অন্যান্য উচ্চমূল্যের মাছ বেশি পাচার হচ্ছে বলে জানিয়েছে সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী।

বিজিবি কর্মকর্তাদের মতে, শিং মাছ ভারতে অত্যন্ত চাহিদাসম্পন্ন এবং প্রতি কেজির বাজারমূল্য বাংলাদেশে যেখানে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, সেখানে ভারতে তা প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়। এ কারণে সীমান্ত চোরাকারবারিরা এ মাছ পাচার করে মোটা অঙ্কের লাভের আশায়।

চোরাকারবারিরা মাছগুলো সাধারণত জীবন্ত অবস্থায় প্লাস্টিকের কনটেইনারে করে আনে এবং তা মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার বা মোটরসাইকেলের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকায় নিয়ে যায়। কখনও কখনও নদী বা সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীদের সহায়তায় এসব মাছ হস্তান্তর করা হয় ভারতের পাচারকারী দলের কাছে।

পাচার রোধে বিজিবির কৌশল

বিজিবি জানিয়েছে, চোরাচালান রোধে তারা প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ও হঠাৎ করে অভিযান চালাচ্ছে। এছাড়া সীমান্তে সার্বক্ষণিক নজরদারি, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং স্থানীয় জনগণের সহায়তা নিয়ে চোরাচালান প্রতিরোধের কৌশল অবলম্বন করছে।

বিজিবি-৬০ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পরিচালক মেজর সাফায়েত হোসেন বলেন, “আমরা কেবল মাছ নয়, সব ধরনের চোরাচালান প্রতিরোধে তৎপর। সীমান্ত এলাকার জনগণকেও এ বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। অনেক সময় পাচারকারীরা স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করে থাকে। তাই আমরা চাই সাধারণ মানুষ আমাদের পাশে থাকুক।”

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় সূত্র জানায়, বেলবাড়ি সীমান্ত এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই চোরাচালানিদের জন্য একটি সক্রিয় রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে সম্প্রতি বিজিবির টহল বৃদ্ধি ও অভিযানের ফলে অনেকটাই কমে এসেছে অবৈধ কার্যক্রম। এক স্থানীয় মৎস্যচাষী বলেন, “আমরা চাই মাছের সঠিক বাজার থাকুক দেশে। পাচার হলে আমাদের ক্ষতি হয়। আবার দেশের রাজস্বও হারায়।”

আরেকজন বলেন, “সীমান্তে বিজিবির এমন কঠোর নজরদারি থাকায় আমরা স্বস্তি পাই। তবে যারা চোরাকারবারি, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা দরকার।”

শিং মাছ ও অর্থনীতি

বাংলাদেশে শিং মাছ একটি অত্যন্ত চাহিদাসম্পন্ন দেশীয় মাছ। এই মাছ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হওয়ায় এবং উচ্চমূল্যের কারণে একে ‘স্বর্ণমুল্য মাছ’ও বলা হয়। স্থানীয় বাজারে এর দাম বেশি হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে এটি আরও বেশি দামে বিক্রি হয়, ফলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লাভের আশায় এই মাছ পাচারের পথে পা বাড়ায়।

একজন মৎস্য গবেষক জানান, “শিং মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি এর রপ্তানি নীতিমালাও থাকা উচিত। যদি বৈধ পথে রপ্তানি সম্ভব হয়, তাহলে দেশ উপকৃত হবে এবং চোরাচালানও কমবে।”

আইনগত ব্যবস্থা

বিজিবি জানিয়েছে, জব্দকৃত মাছ ও মাইক্রোবাস স্থানীয় থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। পরবর্তীতে কাস্টমসের মাধ্যমে মাছ নিলামে বিক্রি করা হয় এবং তা থেকে প্রাপ্ত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধ আইনের আওতায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

বিজিবি কর্মকর্তারা আশাবাদী যে, এমন ধারাবাহিক অভিযানের মাধ্যমে সীমান্তে চোরাচালান কার্যক্রম আরও নিয়ন্ত্রণে আসবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button