ময়মনসিংহে পূর্ব বিরোধের জেরে কৃষককে বল্লমের আঘাতে হত্যা, আহত ৪

ময়মনসিংহের তারাকান্দায় জমিজমা ও ফিসারির বিরোধে সংঘর্ষ, বল্লম ও লাঠির আঘাতে ঘটনাস্থলে আহত হন পাঁচজন। আহত অবস্থায় একজনের মৃত্যু ঘটে পথেই। স্থানীয়দের মাঝে চরম উত্তেজনা।
ঘটনার শুরু: কী, কোথায়, কখন?
ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার বালিখা ইউনিয়নের পশ্চিম বালিখা গ্রামে জমিজমা ও ফিসারির পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (২৮ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এই সংঘর্ষে বল্লমের আঘাতে রফিকুল ইসলাম (৪৫) নামের এক কৃষক নিহত হন। এ ঘটনায় আরও চারজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
নিহত রফিকুল ইসলাম পশ্চিম বালিখা গ্রামের বাসিন্দা ও হাশেম আলীর ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা এবং মাছ চাষের খামার নিয়ে রফিকুল ইসলাম ও একই গ্রামের আমিনুল ইসলাম দেওয়ানীর মধ্যে বিরোধ চলছিল।
শনিবার সকালে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমিনুল ইসলাম দেওয়ানীর নেতৃত্বে কয়েকজন দেশীয় অস্ত্রসহ রফিকুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালায়।
হামলাকারীরা বল্লম ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। গুরুতর আহত অবস্থায় রফিকুল ইসলাম মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে তারাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বালিখাঁ বাজার এলাকায় পৌঁছার আগেই রফিকুল মারা যান।
কেন এই বিরোধ?
এ সংঘর্ষ হঠাৎ কোনো ঘটনা নয়। স্থানীয়দের মতে, গত কয়েক বছর ধরেই দুই পরিবারের মধ্যে জমির মালিকানা এবং একটি ফিসারির দখল নিয়ে উত্তেজনা চলে আসছিল।
দুই পক্ষই একাধিকবার স্থানীয় সালিশে বসেছিল। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদেও একাধিকবার মীমাংসার চেষ্টা হয়, তবে কোনোটিই দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে পৌঁছায়নি।
দুই পক্ষের মধ্যে কয়েকবার হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে আগেও, তবে এবার তা প্রাণঘাতী রূপ নেয়।
আহতদের অবস্থা ও চিকিৎসা
আহতদের মধ্যে রয়েছেন:
মাজেদা খাতুন (৪০)
জোছনা খাতুন (৪০)
জীবন্নাহার (৪৫)
জেসমিন (৩৫)
তাদেরকে প্রথমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসক সূত্রে জানা যায়, মাজেদা খাতুনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার মাথায় ও পিঠে গুরুতর জখম রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য ও তদন্ত
তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন—
“পূর্ব বিরোধের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে এবং জড়িতদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে এবং এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে, যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে।
গ্রামবাসীদের প্রতিক্রিয়া
পশ্চিম বালিখা গ্রামের বাসিন্দারা এই ঘটনার জন্য চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাদের মতে, প্রশাসন যদি আগেই বিরোধের মীমাংসা করত, তাহলে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটতো না।
এলাকায় এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আতঙ্কে অনেকেই সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সামনে কী?
ময়মনসিংহের এই হত্যাকাণ্ড ফের প্রমাণ করল—পূর্ব বিরোধ উপেক্ষা করা কতটা ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
এম আর এম – ০০৯১, Signalbd.com