দেবীগঞ্জে সেনাবাহিনী-পুলিশের অভিযানে জাল নোটসহ প্রতারক চক্রের এক সদস্য গ্রেফতার

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে গভীর রাতে যৌথ অভিযানে ধরা পড়ে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষকে বিদেশি ডলারের প্রলোভনে প্রতারণা করে আসা এক প্রতারক। অভিযানে উদ্ধার হয়েছে জাল নোট, নগদ টাকা, মাদকসেবনের সরঞ্জামসহ নানা আলামত।
কী ঘটেছে
পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে এক প্রতারক চক্রের সদস্য রাশেদ জামান (৪০) গ্রেফতার হয়েছেন। অভিযানে তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এক হাজার টাকার একটি জাল নোট, নগদ ১২ হাজার টাকা, একটি মোবাইল ফোন এবং মাদক সেবনের বিভিন্ন উপকরণ।
এই অভিযান শুক্রবার (২৭ জুন) দিবাগত গভীর রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত চলে। অভিযানটি পরিচালিত হয় দেবীগঞ্জ উপজেলার চেংঠী হাজরাডাঙ্গা ইউনিয়নের চেংঠী দন্ডপাল গ্রামে।
অভিযানের বিস্তারিত ও আলামত জব্দ
রাশেদ জামানকে তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়। অভিযান চলাকালীন তাকে তল্লাশি করে একটি জাল নোট ছাড়াও মোবাইল ফোন, নগদ টাকা ও মাদকসেবনের সামগ্রী পাওয়া যায়। পরে তাকে দেবীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়।
উদ্ধারকৃত আলামতের মধ্যে রয়েছে:
- ১টি জাল এক হাজার টাকার নোট
- ১২,০০০ টাকা নগদ
- একটি মোবাইল ফোন
- মাদকসেবনের সরঞ্জাম
প্রতারণার কৌশল: বিদেশি ডলারের প্রলোভন
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, রাশেদ জামান দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষকে বিদেশি ডলার সরবরাহের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন।
টাঙ্গাইল জেলার তিনজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, রাশেদের নেতৃত্বাধীন প্রতারক চক্র তাদের কাছ থেকে ডলার দেওয়ার কথা বলে প্রায় ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এই অভিযোগের ভিত্তিতেই যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়।
সেনা-পুলিশ যৌথ অভিযান: কীভাবে পরিচালিত হলো
অভিযানে নেতৃত্ব দেন দেবীগঞ্জ আর্মি ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন ইনজামামুল আমীন প্রীমন। তার নেতৃত্বে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত অভিযানে অংশ নেন।
রাশেদের পাশাপাশি তার আরও দুই সহযোগীর বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়, কিন্তু তারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, চক্রটির বাকি সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অতীত ইতিহাস: রাশেদের বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাশেদ জামান আগে থেকেই এলাকায় প্রতারক হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি প্রতারণামূলক কাজের অভিযোগ থাকলেও প্রমাণের অভাবে তাকে ধরা সম্ভব হয়নি।
তবে এবারের অভিযানে হাতেনাতে ধরা পড়ায় কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আইনি প্রক্রিয়া: কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে
দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোয়েল রানা জানান,
“রাশেদ জামানের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মামলার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে তাকে আদালতে তোলা হবে এবং জেলা কারাগারে পাঠানো হবে।”
এছাড়া, প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাসও দেন তিনি।
জনমনে উদ্বেগ: প্রতারণা বন্ধে প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে
একাধিক প্রতারণার ঘটনায় বারবার সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রতারকদের কার্যক্রম থামছে না—এমন মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা। তারা মনে করেন, এমন অভিযান নিয়মিত চালানো উচিত এবং কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কেউ আর সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণার সাহস না পায়।
এম আর এম – ০০৮৫, Signalbd.com