আঞ্চলিক

কুড়িগ্রামের হলহলিয়া নদী থেকে অর্ধগলিত নারীর লাশ উদ্ধার

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন হলহলিয়া নদী থেকে এক অজ্ঞাত নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাটি শুক্রবার রাত ৮টার দিকে দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের পূর্ব ইটালুকান্দা এলাকায় ঘটে। এখনও পর্যন্ত নিহত নারীর পরিচয় পাওয়া যায়নি, তবে স্থানীয়রা ধারণা করছেন, লাশটি সম্ভবত ভারত থেকে ভেসে এসেছে।

হলহলিয়া নদীর জল থেকে মর্মান্তিক লাশ উদ্ধার

রৌমারীর দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের শূন্যরেখার নিকটে অবস্থান করা হলহলিয়া নদী থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে বিজিবি ও পুলিশ। লাশটি উদ্ধারকালে সেটি বেশ কয়েকদিন আগের বলে মনে করা হচ্ছে। স্থানীয় গরুচরানোর সময় স্থানীয়রা নদীতে ভাসমান মরদেহটি দেখতে পান এবং তা দ্রুত বিজিবি ও পুলিশকে জানানো হয়।

রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান জানান, ‘মরদেহটি সীমান্ত থেকে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি স্থানে উদ্ধার করা হয়েছে। লাশের পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি জেলা হাসপাতাল পাঠানো হয়েছে।’

পরিচয় শনাক্তে অনিশ্চয়তা, ভারতীয় সীমান্তের আশঙ্কা

অর্ধগলিত লাশটির পরিচয় না পাওয়া নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বিভিন্ন কথা চলছে। একাংশের ধারণা, এটি ভারতীয় সীমান্ত থেকে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে নদীতে ফেলে দেওয়া হতে পারে। তবে এখনো কোনো তথ্য বা প্রমাণ হাতে আসেনি। রৌমারী থানার উপপরিদর্শক মো. মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘মরদেহটি উদ্ধারকালে বেশ নোংরা ও ক্ষতগ্রস্ত ছিল, তাই পরিচয় শনাক্ত করা কঠিন।’

সীমান্ত এলাকার অপরাধ ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এখানে নানা ধরনের সীমান্ত সংক্রান্ত অপরাধ ঘটে থাকে। অবৈধ অস্ত্র, নকল পণ্য পাচার, মানব পাচারসহ নানা অপরাধের আশ্রয় হয় এই এলাকায়। এর ফলে এখানকার মানুষের নিরাপত্তা ও জীবনযাত্রায় প্রভাব পড়ে।

এই ধরণের লাশ উদ্ধার প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট হয়, সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনকে আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং মানবপাচার ও অপরাধ দমনে জোর দিতে হবে।

কী বলছেন স্থানীয়রা?

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ‘সীমান্ত এলাকা হওয়ায় অনেক সময় অপরাধীরা অনায়াসে এই অঞ্চল দিয়ে মানুষ পাচার করে। আমাদের গ্রাম থেকে অনেকেই নিরুদ্দেশ হয়, কেউ খোঁজ পাই না। এই লাশ উদ্ধারও আমাদের আশঙ্কাকে আরও বেড়ে দিয়েছে।’

বিজিবি ও থানা পুলিশ লাশের পরিচয় শনাক্তে চেষ্টায় রয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ ও অন্য তথ্য জোগাড় করার কাজ চলছে।

ময়নাতদন্তে কী পাওয়া যেতে পারে?

মরদেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা লাশের অবস্থান, মৃতু্যর কারণ, সময়কাল এবং শরীরে থাকা আঘাতের ধরন পরীক্ষা করবেন। এতে হত্যাকাণ্ড বা দুর্ঘটনা—কোনো তথ্য মিললে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সীমান্তবর্তী এলাকায় মানুষের নিরাপত্তা: প্রয়োজন সতর্কতা ও সমন্বয়

সীমান্তবর্তী এলাকায় এই ধরনের ঘটনা দেশীয় নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। স্থানীয় প্রশাসন, বিজিবি, পুলিশ এবং কমিউনিটির মধ্যে সমন্বয় ও সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। এছাড়া, এই অঞ্চলের মানুষের জীবনের প্রতি যত্নবান হওয়া ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন দিকনির্দেশনা এবং কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

  • কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন হলহলিয়া নদী থেকে অর্ধগলিত নারীর মরদেহ উদ্ধার।
  • মৃতার পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি; ধারণা ভারত থেকে ভেসে এসেছে।
  • লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা হাসপাতাল পাঠানো হয়েছে।
  • স্থানীয়রা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
  • সীমান্ত এলাকার অপরাধ দমনে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে অর্ধগলিত নারীর লাশ উদ্ধার একবারেই চিন্তার বিষয়। এটি সীমান্তবর্তী এলাকার নিরাপত্তা ও মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর নতুন প্রশ্ন তোলে। আশা করা যায়, ময়নাতদন্ত ও তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত কারণ দ্রুত উদঘাটিত হবে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। স্থানীয় জনগণ ও প্রশাসনকে একসাথে কাজ করে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে উদ্যোগ নিতে হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button