শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধূমপান ও নেশাজাত দ্রব্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধূমপান ও নেশাজাত দ্রব্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের জন্য জারি হয়েছে কঠোর নির্দেশনা, যার মূল লক্ষ্য স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জন্য জরুরি নির্দেশনা জারি করেছে। এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, শিক্ষক, শিক্ষিকা ও কর্মচারীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালে কোনোভাবেই পান, সিগারেট কিংবা নেশাজাত দ্রব্য গ্রহণ করতে পারবেন না। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের জন্য ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম (ই-সিগারেট বা ইএনডিএস) ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সিফাত উদ্দিন স্বাক্ষরিত নীতিমালায় এই নির্দেশনা কার্যকর করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা
নীতিমালায় বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পূর্ববর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। তারা পরিদর্শনকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করবেন এবং তা নিয়মিত পরিদর্শন প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করবেন।
এই উদ্যোগ শুধু ধূমপানমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার জন্যই নয়, বরং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি স্বাস্থ্যসম্মত ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশে রূপান্তরিত করার জন্যও নেয়া হয়েছে।
শিক্ষকদের জন্য বিশেষ সতর্কতা
নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দায়িত্বকালীন সময়ে কোনো প্রকার নেশাজাত দ্রব্য গ্রহণ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। কারণ শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জন্য রোল মডেল। তাদের যেকোনো অনৈতিক বা ক্ষতিকর আচরণ শিক্ষার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শিক্ষকদের এই নিয়ম মানার বিষয়ে শূন্য সহনশীলতা নীতি অনুসরণ করা হবে। প্রয়োজনে নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন নির্দেশনা
শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ই-সিগারেট ব্যবহার তরুণদের মধ্যে বেড়ে যাওয়ায় সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যেন তারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এই বিষয়ে সচেতন করে তোলে। ক্লাসরুম, ক্যাম্পাস এবং আবাসিক এলাকায় কোনো শিক্ষার্থীকে ই-সিগারেট ব্যবহার করতে দেখা গেলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অতীতে গৃহীত উদ্যোগের ধারাবাহিকতা
বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ধূমপানমুক্ত করার উদ্যোগ নতুন নয়। ২০০৫ সালে “ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন” পাস হওয়ার পর থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে বাস্তবায়নে ঘাটতি থাকায় এখনও অনেক স্থানে এ আইন পুরোপুরি মানা হয়নি।
এই নতুন নির্দেশনা সেই উদ্যোগেরই ধারাবাহিকতা, যেখানে বাস্তবায়নের ওপর আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এবার শুধু ধূমপান নয়, পান, গুটখা, নেশাজাত দ্রব্য এবং ই-সিগারেটকেও স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সমাজের প্রতিক্রিয়া
এই নতুন নির্দেশনা নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া এসেছে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। অনেক অভিভাবক জানিয়েছেন, সন্তানদের স্কুল ও কলেজে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখার জন্য সরকারের এই পদক্ষেপ প্রশংসনীয়।
অন্যদিকে, কিছু শিক্ষার্থী মনে করছে, ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী হলেও ক্যাম্পাসে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আরও কার্যকর প্রচারণা দরকার। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, শুধু নিষিদ্ধ করাই যথেষ্ট নয়; পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে।
আইন ভঙ্গকারীদের জন্য শাস্তির বিধান
নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, কেউ এই নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে প্রাথমিক সতর্কবার্তা দেওয়ার পরও যদি নিয়ম ভঙ্গ অব্যাহত থাকে, তবে প্রশাসনিক শাস্তি এবং চাকরি থেকে অব্যাহতির মতো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতে পারে।
শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। বিদ্যালয় বা কলেজ কর্তৃপক্ষ শৃঙ্খলা কমিটির মাধ্যমে দোষী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার কেন্দ্র। এখানে যদি নেশাজাত দ্রব্যের প্রভাব থাকে, তবে তরুণদের মধ্যে ভুল অভ্যাস ছড়িয়ে পড়বে।
একজন শিক্ষা বিশ্লেষক বলেন, “এই সিদ্ধান্ত শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য নয়, বরং গোটা সমাজের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। শিক্ষকরা যদি সঠিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, তাহলে শিক্ষার্থীরাও সহজেই ভালো অভ্যাস অর্জন করবে।”
পরিশেষে
শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই জরুরি নির্দেশনা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে এ ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ ও নৈতিক পথে পরিচালিত করতে সহায়তা করবে। এখন সবচেয়ে জরুরি হলো নির্দেশনার কার্যকর বাস্তবায়ন। প্রশ্ন হচ্ছে, কেবল নীতি জারি করলেই হবে, নাকি বাস্তবায়নের কঠোরতা আসলেই নিশ্চিত করা যাবে?
এম আর এম – ১০৭৬, Signalbd.com



