টেকনিক্যাল মোড়ে ডিভাইডারে উঠে গেলো বাস, পথচারী নিহত

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা টেকনিক্যাল মোড়ে শুক্রবার (২৭ জুন ২০২৫) দুপুর পৌনে একটায় ঘটে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা। ঢাকা-কুষ্টিয়া রুটের এসবি সুপার ডিলাক্স পরিবহনের একটি বাস সিগন্যাল চলাকালীন দ্রুতগতিতে রোড ডিভাইডারে উঠে গেলে এক পথচারী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এছাড়া, আরও একজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পরিবহন সুরক্ষায় বড় ধরনের অবহেলার প্রমাণ উঠে এসেছে, যা সড়ক নিরাপত্তায় গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
দুর্ঘটনার পরিস্তিতি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় টেকনিক্যাল মোড়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিআইপি মুভমেন্ট ছিল, যার কারণে সড়কের ট্রাফিক সিগন্যাল বন্ধ রাখা হয়েছিল। এই সুযোগে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দ্রুতগতিতে ডিভাইডারের ওপর উঠে যায়। ডিভাইডারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এক পথচারী বাস চাপায় মৃত্যুবরণ করেন, আর একজন গুরুতর আহত হন।
পথচারী নজরুল ইসলাম বলেন, “ভিআইপি মুভমেন্টের জন্য সিগন্যাল বন্ধ ছিল। আমরা রাস্তা পার হচ্ছিলাম, হঠাৎ করে বাসটি ডিভাইডারে উঠে যায়। যিনি সোজাসুজি সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি চাপা পড়েন এবং ঘটনাস্থলেই মারা যান।”
মিরপুর ট্রাফিক জোনের পর্যবেক্ষণ
মিরপুর ট্রাফিক জোনের ট্রাফিক ইনচার্জ আমজাদ হোসেন জানান, দুর্ঘটনার সময় পুলিশ সদস্যরাও সেখানে ছিলেন, তবে দ্রুতগতির বাস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, “বাসটি অতিরিক্ত গতিতে ডিভাইডারে উঠে যায়, যার ফলে একজন পথচারী নিহত হয়েছেন। এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।”
পরিবহন কোম্পানির দায়িত্ব ও কর্তৃপক্ষের তদন্ত শুরু
এই দুর্ঘটনার পর পরিবহন কোম্পানির অবহেলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাস চালক এবং কোম্পানির বিরুদ্ধে দুষ্কৃত্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনার কারণ তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে। তদন্ত শেষে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
ঢাকা শহরের সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত চিত্র
ঢাকা শহরে প্রতিদিনই নানা ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, যার মধ্যে দ্রুতগতিতে চলাচল, নিরাপত্তার অভাব, ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণে গাফিলতি অন্যতম কারণ। বিশেষ করে ভিআইপি মুভমেন্ট চলাকালীন সময়ে সড়ক ব্যবস্থাপনায় অতিরিক্ত সতর্কতা দরকার। ট্রাফিক সিগন্যাল বন্ধ থাকায় সাধারণ পথচারীরা বিপদের মুখে পড়েন। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সড়ক নিরাপত্তা নীতিমালা আরও কঠোর করতে হবে।
সড়ক নিরাপত্তা: সরকারের অগ্রাধিকার
সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। উন্নত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, চালক প্রশিক্ষণ, কড়া আইন প্রয়োগ ও সচেতনতামূলক প্রচারণা জরুরি। ভিআইপি মুভমেন্টের সময় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ প্রয়োজন। নিরাপদ সড়ক গড়ে তোলাই দেশের টেকসই উন্নয়নের অন্যতম প্রধান ভিত্তি।
পথচারীদের জন্য সচেতনতা এবং সড়ক ব্যবহার নিয়মাবলী
পথচারীদেরও উচিত সড়ক ব্যবহার করার সময় বেশি সতর্ক থাকা। ট্রাফিক সিগন্যালের নিয়ম মেনে চলা, নির্ধারিত জায়গায় রাস্তা পার হওয়া এবং দ্রুতগামী যানবাহন থেকে দূরে থাকা অপরিহার্য। সড়ক নিরাপত্তায় সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং একে অপরের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে।
টেকনিক্যাল মোড়ে বাস দুর্ঘটনায় এক পথচারীর প্রাণহানির ঘটনায় সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনার দাবি তুলেছে সাধারণ মানুষ ও বিশেষজ্ঞরা। দ্রুতগামী যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ, সড়ক ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও ট্রাফিক আইন কঠোর করা না হলে এমন দুঃখজনক দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানো সম্ভব হবে না। সরকারের পাশাপাশি পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং চালকদের দায়িত্ববোধ গড়ে তোলা দরকার। কারণ, প্রতিটি জীবনই মূল্যবান, আর সড়ক নিরাপত্তা মানেই জীবনের নিরাপত্তা।