আঞ্চলিক

কলেজের গাফিলতিতে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারলেন না দুই ছাত্র: কে নেবে এর দায়?

 প্রবেশপত্র না পাওয়ায় পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়েও পরীক্ষা দিতে পারলেন না উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী—তদন্ত কমিটি গঠন, বরখাস্ত শিক্ষক, কিন্তু সমাধান কোথায়?

ঘটনার সারসংক্ষেপ:

ঢাকার উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়াসিন আরাফাত ও সাজ্জাদ হোসেন, নিয়মিত ক্লাস করেও এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। প্রবেশপত্র না পাওয়ায় তারা সকাল ১০টা পর্যন্ত পরীক্ষাকেন্দ্রে অপেক্ষা করেও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। তাদের অভিযোগ—কলেজ কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অনিয়মের কারণেই এই পরিস্থিতি

ভুক্তভোগীদের আর্তি:

ইয়াসিন আরাফাত বলেন:

“আমি পরীক্ষার হলে থাকার কথা, আমি কেন কলেজ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকব? আমাদের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। আমরা রাষ্ট্রের কাছে বিচার চাই।”

সাজ্জাদ হোসেন বলেন:

“আমি ক্লাস ক্যাপ্টেন, নিয়মিত ছাত্র। অথচ আমারই এডমিট কার্ড মেলেনি। এমন অবহেলা মানা যায় না। কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি।”

কলেজ কর্তৃপক্ষের নিরবতা:

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ বা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেউই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। সকাল ৯টা পর্যন্ত প্রবেশপত্র দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিলেও, তারা কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে থেকে ১০টাতেও কিছু পাননি।

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া:

বেলা সাড়ে ১১টায় ঘটনাস্থলে যান উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন:

“এটি দুঃখজনক। অভিভাবকরা চাইলে আমরা আইনি দিক থেকেও বিষয়টি দেখব।”

তদন্ত কমিটি ও বরখাস্তের ঘোষণা:

ডিএনসিসি অঞ্চল-১০ এর নির্বাহী কর্মকর্তা ও গভর্নিং বডির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম জানান,

  • ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে
  • ফরম ফিলাপে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে
  • গাফিলতির জন্য দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে

তবে, বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকের নাম জানাতে ব্যর্থ হন তিনি।

প্রধান প্রশ্ন:

  •  ছাত্ররা টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করেছে, তাদের তথ্য সংরক্ষণে গাফিলতি কেন?
  •  প্রবেশপত্র না দেওয়া হলে তা আগে জানানো হয়নি কেন?
  •  একাধিকবার ফোন করেও কেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কল ধরেননি?
  •  গাফিলতির শিকার ছাত্ররা কবে আবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে?

এ ঘটনা শুধু দুই ছাত্র নয়, গোটা শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি প্রশ্ন তুলেছে:

“যদি ক্লাস টপার হয়েও কেউ পরীক্ষায় বসতে না পারে, তবে বাকিদের ভবিষ্যৎ কী?”

ভবিষ্যতের সুপারিশ:

  1.  প্রবেশপত্র সরবরাহে নির্ধারিত সময়ের আগে পুনঃনিরীক্ষা
  2.  প্রতিটি শিক্ষার্থীর নাম কলেজ ও বোর্ডে ক্রস-চেক
  3.  অনলাইনে অ্যাডমিট যাচাইয়ের সুযোগ
  4.  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গাফিলতির জন্য ক্ষতিপূরণ ও আইনি ব্যবস্থা
  5.  বিশেষ পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা—ভুক্তভোগীদের জন্য মেকআপ পরীক্ষা

এইচএসসি পরীক্ষা একটি শিক্ষার্থীর জীবনে মোড় ঘোরানো ঘটনা। সেখানে কলেজের অবহেলায় পরীক্ষায় বসতে না পারা শুধুই “একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল” নয়—এটি একজন শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ও ভবিষ্যতের ওপর আঘাত।

এম আর এম – ০০৭১, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button