আঞ্চলিক

সেনাবাহিনীর সহায়তায় চুরি হওয়া রিকশা ফিরে পেয়ে স্বস্তির হাসি রাকিবের

নড়াইলের অটোরিকশা চালক রাকিবের লোনে কেনা একমাত্র উপার্জনের মাধ্যমটি চুরি হওয়ার পর ভেঙে পড়েছিলেন পুরো পরিবার। সেনাবাহিনীর তৎপরতায় অবশেষে ফিরে এসেছে রিকশাটি—আবারও জীবনে ফিরে এসেছে আশা।

হারিয়ে গিয়েছিল জীবনের একমাত্র ভরসা

নড়াইল সদর উপজেলার ধৌন্দা গ্রামের বাসিন্দা মো. রাকিব শিকদার। ছয় সদস্যের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। রিকশা চালিয়েই সংসার চালানো রাকিব সম্প্রতি এক কঠিন সময়ের মুখোমুখি হন—চুরি হয়ে যায় তার একমাত্র ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।

চুরি হওয়ার পর দিশেহারা হয়ে পড়েন রাকিব। অথচ সেই রিকশাই ছিল তার পরিবারের খাবার জোগাড়ের একমাত্র উপায়। তবে শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সক্রিয় পদক্ষেপে অটোরিকশাটি উদ্ধার হওয়ায় রাকিব ও তার পরিবারে ফিরেছে স্বস্তি ও আনন্দ।

চুরি, জিডি ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা

রাকিব জানান, “লোনে কেনা রিকশাটা হারিয়ে যাওয়ার পর আমার সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। ওইটা ছাড়া সংসার চলে না।”

চলতি মাসের ৭ জুন দুপুরে খাবার খেতে গিয়ে বাড়ির সামনের রাস্তায় রিকশাটি রেখে যান রাকিব। মাত্র আধাঘণ্টা পর ফিরে এসে দেখেন, রিকশাটি আর নেই। প্রথমে হতভম্ব হলেও কিছুক্ষণ পর তিনি নড়াইল সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন এবং একই কপিটি সেনাবাহিনীর স্থানীয় ক্যাম্পে জমা দেন।

২৩ জুন বিকেলে সদর হাসপাতাল এলাকায় সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা দলের চোখে পড়ে একটি সন্দেহজনক ব্যাটারিচালিত রিকশা। চালককে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সন্দেহ বেড়ে গেলে খবর দেওয়া হয় টহল টিমকে। তবে টহল দল আসার আগেই চালক পালিয়ে যায়। পরে রিকশাটি জব্দ করে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেনাবাহিনী যথাযথ যাচাই-বাছাই শেষে ২৬ জুন সকালে রিকশাটি রাকিবের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করে।

রাকিবের কষ্টের গল্প: লোনে কেনা জীবনযুদ্ধের সঙ্গী

রিকশাটি ছিল রাকিবের জীবনের একমাত্র সহায়। তিনি বলেন, “আমি আগেও লোন নিয়ে রিকশা কিনেছিলাম। সেটার কিস্তি পরিশোধ করে নতুন করে দেড় লাখ টাকা লোন নিয়ে ব্যাটারি ও অন্যান্য খুচরা যন্ত্রাংশ বদলাই। রোজগারের একমাত্র উপায় ছিল এই গাড়িটা। প্রতিদিন সেটা চালিয়ে কিস্তি দিই, পরিবারের খরচ মেটাই।”

একটি অটোরিকশা চুরি হওয়ার ঘটনাটি যেখানে একটি সাধারণ চুরির মতো মনে হতে পারে, সেখানে রাকিবের মতো গরিব মানুষের জন্য এটি ছিল জীবনের অস্তিত্ব সংকট।

তিনি আরও বলেন, “সেনাবাহিনী শুধু রিকশাটা উদ্ধার করেনি, আমাদের পরিবারটাকেই বাঁচিয়ে দিয়েছে। আমি আজীবন তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।”

সেনাবাহিনীর তৎপরতা ও মানবিক দৃষ্টান্ত

নড়াইল সেনা ক্যাম্পের পক্ষ থেকে জানানো হয়, “আমরা জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। যে কোনো অপরাধ প্রতিহত করতে সেনাবাহিনী সদা প্রস্তুত। এই ধরনের ঘটনা আমাদের নজরদারি এবং তদন্ত কার্যক্রমের সফল উদাহরণ।”

এই ঘটনার মাধ্যমে সেনাবাহিনী আবারও প্রমাণ করল, তারা শুধু সীমান্ত রক্ষা বা যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, দেশের সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখেও পাশে থাকে।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া: 

এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারাও সেনাবাহিনীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অনেকেই বলেছেন, “অন্য কেউ হলে হয়তো গুরুত্বই দিত না, কিন্তু সেনাবাহিনীর আন্তরিকতা দেখে আমরা মুগ্ধ।”

এমন ঘটনা কেবল রাকিব নয়, সমাজেও একটি ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিয়েছে—আইনের সঠিক প্রয়োগ আর মানবিক চেতনা একসাথে থাকলে অনেক কিছুই সম্ভব।

ছোট ঘটনা, বড় দৃষ্টান্ত

একটি চুরি হওয়া অটোরিকশা উদ্ধার—এই ঘটনাটি হয়তো জাতীয় বা আন্তর্জাতিক গুরুত্ব বহন করে না। কিন্তু এটি এমন একটি দৃষ্টান্ত, যা সাধারণ মানুষের জীবনে বাস্তবিক পরিবর্তন আনতে পারে।

এটা বোঝায়, রাষ্ট্রীয় বাহিনী কেবল প্রশাসনিক কাজে নয়, মানবিক কার্যক্রমেও কতটা নিষ্ঠাবান। একই সঙ্গে এটি আমাদের নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রতি আস্থা বাড়ায়।

নতুন আশার আলো

রিকশা ফিরে পাওয়ার পর রাকিবের চোখে জল, কিন্তু সেটি দুঃখের নয়—আনন্দের। তার পরিবারে ফিরেছে হাসি, বেঁচে থাকার আশা। সেনাবাহিনীর এই উদ্যোগ শুধু একটি অটোরিকশা নয়, একটি পরিবারের ভবিষ্যৎ ফিরিয়ে দিয়েছে।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই ধরণের ছোটখাটো অপরাধের শিকারে যেন আর কেউ না হন, তার জন্য কি সমাজ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও কিছু করণীয় রয়েছে না?এম আর এম – ০০৫৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button