আঞ্চলিক

রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় সবাই অবজ্ঞা করত, সেই সৌরভ চান্স পেলেন ঢাবিসহ ৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে

একসময় পিইসি, জেএসসি ও এসএসসি-তে মেধার স্বাক্ষর রাখতে না পারা সেই সৌরভ আজ সফলভাবে চান্স পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের পাঁচটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কীভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করলেন এই ছাত্র? জেনে নিন তার সংগ্রামের অনুপ্রেরণামূলক গল্প।

এক সময় যাকে সবাই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করত তার ‘খারাপ’ রেজাল্টের কারণে, সেই আহম্মেদ সৌরভ এখন একসঙ্গে চান্স পেয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। সংগ্রাম, আত্মবিশ্বাস আর অদম্য মনোভাবই তাকে এনে দিয়েছে এই সাফল্য।

ঢাবি সহ ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় দুর্দান্ত ফল করেছেন আহম্মেদ সৌরভ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটে তার অবস্থান ১৩৩তম। এছাড়াও, তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩তম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০৩তম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৬৭তম এবং গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫তম স্থান অর্জন করেছেন।

বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। তার স্বপ্ন, একদিন নিজেই একটি বড় কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হওয়া এবং দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা।

পেছনের গল্প: রেজাল্ট খারাপ, তবু স্বপ্নে আঁকা ভবিষ্যৎ

সৌরভের শিক্ষা জীবনের শুরুর দিকে ছিল হতাশাজনক। পিইসি-তে পেয়েছিলেন ৪.১৭, জেএসসি-তে ৪.৫০, এবং এসএসসি-তে ৪.৭২ জিপিএ। এই ফলাফলে আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে পাড়া-প্রতিবেশী, অনেকেই ধরে নিয়েছিল — এই ছেলের ভবিষ্যৎ নেই।

এসএসসির পর তাকে পরামর্শ দেওয়া হয় যেন গ্রামের কলেজেই পড়ে। কিন্তু সৌরভ তার ভাগ্য নিজেই পাল্টাতে চেয়েছিলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন ঢাকায় আসার এবং বিজ্ঞান বিভাগ ছেড়ে কমার্স বিভাগে অধ্যয়ন শুরু করার।

“এই একটি সিদ্ধান্তই আমার জীবন পাল্টে দিয়েছে,”— বলেন সৌরভ।

পরিশ্রমের গল্প: দিনে ১২ ঘণ্টা পড়াশোনা

এইচএসসির সময় থেকে সৌরভ মনস্থ করেন, এখন থেকে ভালো ফল করতে হবে — না হলে সুযোগ কখনোই আসবে না। দৈনিক ১০-১২ ঘণ্টা করে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি।

প্রথম বর্ষ থেকেই তিনি ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। শুধু টেক্সট বই নয়, সাথে সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন ব্যাংকও সমাধান করতেন নিয়মিত।

একটা গল্প পড়ে সেটি থেকে বিগত বছরে কী প্রশ্ন এসেছিল, তা খুঁজে বের করে নিজে নিজেই অনুশীলন করতেন।

মায়ের কান্না থেকেই অনুপ্রেরণা

প্রস্তুতির সময় হতাশা বারবার এসেছে সৌরভের জীবনে। নিজেকে অনেকবার প্রশ্ন করেছেন—”আমি কি পারব?” তখন মায়ের কান্নাভেজা মুখ মনে পড়ে যেত তার।

“আমার মা কাঁদতেন, ভাবতেন আমি কোনোদিন ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারব না। সেই কান্না আমাকে জেদী করে তুলেছিল। মাকে হাসাতে, গর্বিত করতে আমি পরিশ্রম করেছি,”— বলেন সৌরভ।

এইচএসসিতে জিপিএ ৫, তারপর একের পর এক সাফল্য

নিজের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা এবং পরিশ্রমের ফলে সৌরভ এইচএসসি-তে পেয়েছেন জিপিএ ৫। এরপর একে একে পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পান। প্রতিটি জয় যেন তার আত্মবিশ্বাস আর জেদের ফসল।

ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের জন্য সৌরভের পরামর্শ

ভর্তি পরীক্ষার জন্য যারা এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের উদ্দেশে সৌরভ বলেন—

“আপনার রেজাল্ট যদি এখন ভালো না-ও হয়, তাহলে ভাববেন না আপনি পারবেন না। এখন থেকেই যদি সিরিয়াসলি পড়াশোনা শুরু করেন, তাহলে ভর্তি পরীক্ষার নম্বর দিয়েই আপনি রেজাল্টের ঘাটতি কভার করতে পারবেন।”

তাঁর মতে, এইচএসসি শেষ হওয়ার পর নয়, বরং প্রথম বর্ষ থেকেই প্রস্তুতি শুরু করা উচিত। যত আগে শুরু করবেন, তত এগিয়ে থাকবেন।

অসম্ভব কিছু নয়, চাই শুধু জেদ ও পরিশ্রম

আহম্মেদ সৌরভের গল্প প্রমাণ করে — জীবনের শুরুতে পিছিয়ে থাকা মানেই শেষ হয়ে যাওয়া নয়। সামনের পথটা কঠিন হলেও, পরিশ্রম আর মানসিক দৃঢ়তা থাকলে সবই সম্ভব।

ভবিষ্যতের অনেক শিক্ষার্থীর জন্য সৌরভ হয়ে উঠতে পারেন প্রেরণার উৎস। হয়তো তিনি একদিন বলবেন—”আমি কোনো অলৌকিক কিছু করিনি, আমি শুধু হাল ছাড়িনি।”এম আর এম – ০০৪৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button