দুর্নীতির দায়ে আক্কেলপুরের ওসি মাসুদ এখন এসআই

ঘুষ গ্রহণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে বিভাগীয় মামলায় জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানাকে এসআই পদে অবনমিত করা হয়েছে। বদলি করা হয়েছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায়। ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার।
ঘটনার বিস্তারিত
জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা দুর্নীতির অভিযোগে বিভাগীয় মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পদাবনতি পেয়েছেন। তাঁকে পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) পদ থেকে উপপরিদর্শক (এসআই) পদে নামিয়ে আনা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাঁকে আক্কেলপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিএসবি)-তে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব নিশ্চিত করে বলেন, “একটি বিভাগীয় মামলার রায়ে তাকে শাস্তিমূলকভাবে পদাবনতি দিয়ে এসআই করা হয়েছে এবং থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ডিএসবি-তে পাঠানো হয়েছে।”
কী অভিযোগে এই শাস্তি?
সূত্র জানায়, ওসি মাসুদ রানা ২০১৮ সালে রংপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) কর্মরত ছিলেন। সে সময় রংপুরের পীরগঞ্জ থানার একটি হত্যা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কাজে তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ ওঠে। এ সংক্রান্তে একটি বিভাগীয় মামলা গঠন করা হয় এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
অভিযোগের ভিত্তিতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শেষে সম্প্রতি সিদ্ধান্ত আসে, যার ফলে তাকে আগামী তিন বছরের জন্য পদাবনতি করে এসআই করা হয়েছে।
ওসির থানা ত্যাগ ও দায়িত্ব হস্তান্তর
জানা গেছে, আক্কেলপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে মাসুদ রানা যোগ দেন ২০২৩ সালের জুলাই মাসে। এরপর ২০২৫ সালের মার্চ মাসে তিনি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পান। তবে মাত্র দুই মাসের মাথায় তিনি দায়িত্ব হারান।
গতকাল মঙ্গলবার তাকে থানার দায়িত্ব থেকে সরানো হয়। বর্তমানে আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করছেন পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোমিনুল ইসলাম।
পুলিশ বিভাগের প্রতিক্রিয়া
জেলা পুলিশের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা যায়, মাসুদ রানার বিরুদ্ধে আগে থেকেই অভিযোগ ছিল। তবে প্রক্রিয়াগত কারণে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন তদন্ত সম্পন্ন হওয়ায় তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এ ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসন কঠোর। মাসুদ রানা শাস্তি পেয়েছেন, ভবিষ্যতে কেউ এমন কাজ করলে তার ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রশাসনিক দৃষ্টিতে এই পদক্ষেপের গুরুত্ব
পুলিশ বিভাগে দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার চর্চা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রশাসন এসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা। একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “পুলিশ সদস্যদের আচরণে যদি দুর্নীতির ছাপ থাকে, তাহলে তা পুরো বাহিনীর ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সেক্ষেত্রে এমন শাস্তি বার্তা বহন করে।”
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
আক্কেলপুর থানা এলাকায় ওসি পরিবর্তনের ঘটনাটি স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কিছু ব্যবসায়ী ও সাধারণ নাগরিক জানিয়েছেন, ওসি মাসুদ রানার অধীনে থানার সেবার মান প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। একজন স্থানীয় শিক্ষক বলেন, “বিভিন্ন কাজে থানা যেতে হলে হয়রানির শিকার হতে হতো। তার অপসারণে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে।”
পদক্ষেপ ও প্রশ্ন
ওসি মাসুদ রানার ভবিষ্যৎ কার্যক্রম কেমন হবে তা নিয়ে জেলাজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। যদিও তাকে বর্তমানে ডিএসবি-তে সংযুক্ত করা হয়েছে, তবে তিন বছর পর তার পূর্ণ পদমর্যাদা পুনরুদ্ধার হবে কি না তা নির্ভর করবে পরবর্তী মূল্যায়নের ওপর।
“দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না” — পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব
সারসংক্ষেপঃ
পুলিশ বাহিনীর মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী এই পদক্ষেপ প্রশাসনিক সুশাসনের একটি নজির হিসেবে উঠে এসেছে। বিশেষ করে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এটি একটি সতর্ক বার্তা। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এক বা দু’টি শাস্তির মধ্যে দিয়ে পরিবর্তন সম্ভব নয়, বরং এটি হতে হবে ধারাবাহিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়াস।
ভবিষ্যতে এমন পদক্ষেপ নিয়মিত হলে কি পুলিশ বাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে? সে উত্তর সময়ই দেবে।
এম আর এম – ০০৪৪, Signalbd.com