আঞ্চলিক

নির্যাতনের শিকার ফরিদগঞ্জের আশু পাটওয়ারী: গাছে বেঁধে মারধরের ভিডিও ভাইরাল

বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জে এক নির্মম ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। আশু পাটওয়ারী ওরফে আশিক (৪০) নামে এক যুবককে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয়রা ও অনলাইন ব্যবহারকারীদের মধ্যে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে

ঘটনার বিবরণ

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ জুন শুক্রবার ফরিদগঞ্জ উপজেলার মধ্য পোয়া গ্রামে এই ঘটনা সংঘটিত হয়। আশু পাটওয়ারীর স্ত্রী সেলিনা বেগমের পরকীয়া সন্দেহ থেকে পারিবারিক কলহ শুরু হয়। পরবর্তীতে পারিবারিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়ে আশুকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে আহত করে। আহত আশু পাটওয়ারী নিজেও থানায় লিখিত অভিযোগ করেন, তবে পরে পরিস্থিতি বুঝে অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নেন।

পারিবারিক পটভূমি

আশু পাটওয়ারী ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের মনু পাটওয়ারীর ছেলে। তিনি মধ্য পোয়া গ্রামের হান্নান মিয়ার মেয়ে সেলিনা বেগমের সাথে প্রায় ১৫ বছর আগে বিয়ে করেন। মাথা গোঁজার জায়গা না থাকার কারণে তিন সন্তান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করছেন আশু। তিনি একজন শ্রমিক, নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে পরিবারের জীবনযাপন করেন।

ঘটনার সময় পরিস্থিতি

আশু জানান, ‘মানুষ আমাকে বলেছে আমার স্ত্রী ও আমার ভাই জহিরের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এই কথায় ক্ষুব্ধ হয়ে আমি বাড়িতে এসে মারধর ও ভাঙচুর করেছি। এরপর আমার শ্যালক আমির হোসেন আমাকে মারধর করেন। আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছিলাম, পরে বিষয়টি বুঝে অভিযোগ তুলে নিয়েছি।’

অন্যদিকে, অভিযুক্ত মো. আমির হোসেন ঘটনার সত্যতা মেনে নিয়ে বলেন, ‘আমার বোন, ভাগিনা-ভাগ্নি ও মাকে আমার দুলাভাই মারধর করায় আমি রাগ সামলাতে না পেরে তাকে মারেছি। আমি বিষয়টি মেনে নিয়েছি এবং দুলাভাইয়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে সমাধান করেছি।’

আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

ফরিদগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মো. আমজাদ আলী জানান, ‘আশু পাটওয়ারী থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। পরে তিনি অভিযোগটি প্রত্যাহার করেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি।’

সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা

এই ধরনের পারিবারিক সহিংসতা এবং গাছে বেঁধে পিটিয়ে নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় সামাজিক মাধ্যমে নিন্দার ঝড় বয়ে গেছে। অনেকেই পরিবার ও সমাজে নারী-পুরুষের প্রতি সহানুভূতি এবং সঠিক বিচার দাবী করছেন। একইসাথে পারিবারিক কলহের মধ্যে সহিংসতার পথ না নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।

সহিংসতা ও পারিবারিক কলহ: সমাজের গুরুতর সমস্যা

বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় এখনও অনেক পরিবারে পারিবারিক কলহ ও সম্পর্কের অবনতি সহিংসতায় রূপ নেয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনের প্রতি আস্থা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই ধরনের ঘটনাকে কমানো সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। পারিবারিক কলহে আইনগত সহায়তা নেওয়া এবং মধ্যস্থতা করাই উত্তম পথ।

পরবর্তী করণীয় ও প্রতিকার

পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ প্রত্যাহার করা হলেও এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা এবং আইনি ব্যবস্থা কঠোর করার। আশুর মতো নির্যাতিত ব্যক্তি যাতে নিরাপদে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করাই রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব।

কীভাবে প্রতিরোধ করা যায় পারিবারিক সহিংসতা?

  • সচেতনতা বৃদ্ধি: পারিবারিক কলহের ক্ষেত্রে সহিংসতার পরিবর্তে আলোচনা ও মধ্যস্থতা করতে হবে।
  • আইনের সমর্থন: নির্যাতিতরা যাতে নির্ভয়ে আইনি সহায়তা নিতে পারে, তার জন্য প্রয়োজন সহজলভ্য ও বিশ্বস্ত সেবা।
  • সামাজিক সাহায্য কেন্দ্র: স্থানীয় পর্যায়ে পরামর্শক ও সহায়তা কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।
  • পরিবারিক শিক্ষা: পারস্পরিক সম্মান ও সহনশীলতা বৃদ্ধি করতে পারিবারিক শিক্ষা জরুরি।

ফরিদগঞ্জে আশু পাটওয়ারীর গাছে বেঁধে মারধরের ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়া সামাজিক অস্বস্তি ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। পারিবারিক কলহের এই সহিংসতা বন্ধ করতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও সামাজিক সহানুভূতি বৃদ্ধি ছাড়া এমন ঘটনাগুলো রোধ করা কঠিন। সমাজের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য পারিবারিক সম্পর্কের মধ্যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button