বাংলাদেশ

সাবেক সচিব মিহির কান্তিসহ ১৩ জনের বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা

ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত সাবেক সচিব মিহির কান্তি মজুমদারসহ এনজিও উদ্দীপনের পরিচালনা পর্ষদের ১৩ জন কর্মকর্তার বিদেশগমন নিষিদ্ধ করেছে। একইসঙ্গে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সাময়িকভাবে ব্লক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।

ঘটনার বিস্তারিত

দুদকের সহকারী পরিচালক শোয়াইব ইবনে আলম আদালতে দুটি পৃথক আবেদন করেন, যাতে বলা হয় অভিযুক্তরা দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তাধীন। আদালত আবেদনের শুনানি শেষে ১৩ জনের বিরুদ্ধে বিদেশযাত্রা নিষেধাজ্ঞা ও এনআইডি ব্লকের নির্দেশ দেন।

যাদের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হলেন: মিহির কান্তি মজুমদার (সাবেক সচিব ও উদ্দীপনের সাবেক চেয়ারম্যান), জাকিয়া কে হাসান (সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান), ড. মো. গোলাম আহাদ (সাবেক কোষাধ্যক্ষ), মো. মাহবুবুর রহমান (সাবেক সদস্য), মো. নজরুল ইসলাম খান, নাহিদ সুলতানা, ভবতোষ নাথ, ড. আবু জামিল ফয়সাল, শওকত হোসেন, রেজা সেলিম মো. তৈয়বুল হক, রেহানা বেগম, মো. মোস্তাফিজুর রহমান (ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ও সদস্য-সচিব) এবং বিদ্যুৎ কুমার বসু (নির্বাহী পরিচালক)।

অভিযোগ

দুদকের আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্তরা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে এমআরএ আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে উদ্দীপনের ক্ষুদ্রঋণ তহবিল থেকে বিনিয়োগ বা খরচের নামে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এ জন্য প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

এই অভিযোগে দুদক ইতিমধ্যেই মিহির কান্তিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা দায়ের করেছে। বর্তমানে মামলাগুলো তদন্তাধীন। সূত্র মতে, আসামিরা চাইলে দেশ ত্যাগ করে তদন্ত প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারেন—এমন আশঙ্কা থেকেই আদালত এই নিষেধাজ্ঞার নির্দেশ দিয়েছেন।

এর আগে নেওয়া ব্যবস্থা

গত ১৬ জুন একই মামলার প্রক্রিয়ায় মিহির কান্তিসহ ১০ জনের দেশত্যাগে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। এবার নতুন করে বাকি সদস্যদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে তালিকাটি হালনাগাদ করা হয়েছে।
এছাড়া গত ২৮ এপ্রিল একই মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে ৬টি মামলা দায়ের করে দুদক। এর ফলে এই মামলার তদন্ত আরও জোরদার হয়।

মিহির কান্তি মজুমদারের কর্মজীবন

মিহির কান্তি মজুমদার ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান।
সেই সময়ে এনজিও খাতে তার প্রভাব ছিল উল্লেখযোগ্য। তবে সাম্প্রতিক দুর্নীতি মামলার কারণে তার নাম এখন তদন্তের কেন্দ্রে।

এই সিদ্ধান্তের প্রভাব

দুদক এবং আদালতের এই নির্দেশনায় অভিযুক্তদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ হলো। একইসঙ্গে তদন্ত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে।
দুদক কর্মকর্তারা মনে করছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও নথিপত্র সংগ্রহ করা যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় এনজিওগুলোর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনা এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ একটি নজির হয়ে থাকবে। তবে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অভিযোগ প্রমাণিত হবে না।

বিশেষজ্ঞ মতামত

অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশে এনজিও খাতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর আইন প্রয়োগ করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে নিয়মিত অডিট এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করলে এ ধরনের অনিয়ম ভবিষ্যতে কমবে।
একজন দুর্নীতি দমন বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেন, “এটি একটি সতর্ক বার্তা। এনজিও খাতে যারা জনস্বার্থের অর্থ নিয়ে অপব্যবহার করেন, তারা আর নিরাপদ নন।”

সারসংক্ষেপ  

দুদকের মামলার তদন্ত এখনো চলমান। অভিযুক্ত ১৩ জনের বিদেশযাত্রা নিষিদ্ধ হওয়ায় তদন্তের কাজ সহজ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
আগামী মাসগুলোতে মামলার অগ্রগতি এবং আদালতের পরবর্তী নির্দেশনার ওপর নির্ভর করছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এখন দেশের নজর এই মামলার ভবিষ্যৎ পরিণতির দিকে।

এম আর এম – ০৫৮৫ , Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button