আঞ্চলিক

কু‌ষ্টিয়ায় বিলুপ্ত প্রজা‌তির ৬৭‌টি কচ্ছপ উদ্ধার, র‌্যাবের চোখ ধাঁধানো অভিযান

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার সাতবাড়িয়া বাজারে বিক্রির সময় বিলুপ্তপ্রায় ৬৭টি কড়িকাইট্টা প্রজাতির কচ্ছপ উদ্ধার করেছে র‌্যাব। অভিযান চালিয়ে এক যুবকের কাছ থেকে কচ্ছপগুলো জব্দ করা হয় এবং বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

র‍্যাবের হঠাৎ অভিযান

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় সাতবাড়িয়া বাজারে অভিযান চালিয়ে র‍্যাব-১২ উদ্ধার করেছে বিলুপ্তপ্রায় ৬৭টি কড়িকাইট্টা প্রজাতির কচ্ছপ। সোমবার বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে অংশ নেয় র‍্যাব-১২ সিপিসি-১ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের একটি বিশেষ দল।

র‍্যাব জানায়, কচ্ছপগুলো অবৈধভাবে বাজারে বিক্রি হচ্ছিল। এক যুবক ক্রেতার ছদ্মবেশে কচ্ছপ বিক্রি করছিলেন। তাৎক্ষণিকভাবে র‍্যাব তাকে ঘিরে ফেলে এবং কচ্ছপগুলো জব্দ করে।

উদ্ধার ও হস্তান্তর: বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে মুক্তি

র‍্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উদ্ধার করা কচ্ছপগুলোর মধ্যে ছিল ১১টি বড় এবং ৫৬টি ছোট আকারের। অভিযানের পরপরই কচ্ছপগুলো ভেড়ামারা বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সেগুলোকে উন্মুক্ত জলাশয়ে অবমুক্ত করা হয়।

ভেড়ামারা উপজেলা বন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, “এ ধরনের উদ্ধার অভিযান শুধু প্রাণীগুলোর জীবন রক্ষা করে না, বরং পরিবেশ রক্ষার দিকেও বড় একটি পদক্ষেপ।”

ধৃত ব্যক্তি ও তার উদ্দেশ্য

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কচ্ছপ বিক্রির সঙ্গে জড়িত ওই যুবকের নাম মাহি (২০)। তিনি ভেড়ামারার সাতবাড়িয়া এলাকার মহিবুল ইসলামের ছেলে। জানা গেছে, মাহি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কচ্ছপ সংগ্রহ করে এনে বাজারে বিক্রি করছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই কাজের সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে।

র‍্যাব বলছে, ঘটনাটির পেছনে একটি পাচার চক্র সক্রিয় থাকতে পারে। বিষয়টি আরও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

বিলুপ্ত প্রজাতির কড়িকাইট্টা কচ্ছপ: পরিচিতি ও সংকট

কড়িকাইট্টা কচ্ছপ (Indian Roofed Turtle) সাধারণত ভারতীয় উপমহাদেশে দেখা যায়। এটি একটি বিলুপ্তপ্রায় জলজ সরীসৃপ, যা নদী, খাল বা জলাশয়ে বসবাস করে। আন্তর্জাতিকভাবে এই প্রজাতিটি ‘ভালনারেবল’ হিসেবে তালিকাভুক্ত। বাংলাদেশে এদের দেখা পাওয়া এখন খুবই বিরল।

এই কচ্ছপ প্রজাতিটি খাদ্য এবং ওষুধে ব্যবহারের জন্য চোরা বাজারে ব্যাপক চাহিদার শিকার। ফলে দিনের পর দিন তারা বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছে।

প্রাকৃতিক ভারসাম্যে কচ্ছপের ভূমিকা

কচ্ছপ শুধু পরিবেশের একটি অঙ্গ নয়; তারা প্রাকৃতিক জলাশয়ের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা মৃত প্রাণী বা আবর্জনা খেয়ে পরিবেশকে পরিষ্কার রাখে। ফলে কচ্ছপের বিলুপ্তি মানে হলো একটি প্রাকৃতিক পরিষ্কারক ব্যবস্থা হারিয়ে ফেলা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “কচ্ছপ শুধু একটি প্রাণী নয়, বরং একটি জলজ বাস্তুতন্ত্রের রক্ষক।”

চোরাচালান প্রতিরোধে প্রয়োজন কঠোর নজরদারি

এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো, বাংলাদেশে এখনও বন্যপ্রাণী পাচারের প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে বিদ্যমান। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিয়মিত নজরদারি চালানো না হলে এসব প্রজাতি আর কখনো প্রকৃতিতে ফিরবে না।

বন অধিদপ্তর ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো মনে করছে, জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী সংরক্ষণ সম্ভব নয়।

পুনরাবৃত্তির সুযোগ নেই

একটি প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হলে তা আর ফিরে আসে না। তাই প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় এ ধরনের অভিযান অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং জরুরি। তবে এটি যদি শুধু একটি ঘটনাবহুল ‘সংবাদ’ হয়ে থাকে, তাহলেই সমস্যার সমাধান হবে না। ভবিষ্যতে এই ধারা বজায় রাখতে প্রয়োজন আরও কঠোর আইন প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button