আঞ্চলিক

শাপলা মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঘোষণা করেছেন যে তাদের দল শাপলা প্রতীক নিয়ে আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেবে। রোববার (২২ জুন, ২০২৫) সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান। এনসিপি নির্বাচন কমিশনের সব শর্ত পূরণ করেছে বলে নাহিদ ইসলাম দাবি করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ১০৫টি উপজেলা ও ২৫টি জেলা কমিটি গঠন এবং প্রতিটি উপজেলায় ২০০ জন সমর্থকের ফর্ম পূরণ ও প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় অফিস স্থাপন সংক্রান্ত দাপ্তরিক চুক্তির কাগজপত্র জমা দেওয়া।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, তার দল শাপলা প্রতীক নিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। রোববার (২২ জুন, ২০২৫) সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে এক ফলপ্রসূ বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। নাহিদ ইসলামের এই ঘোষণা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রে জাতীয় প্রতীক ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে।

নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এনসিপি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্ধারিত সকল শর্ত সফলভাবে পূরণ করেছে। তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনের শর্ত পূরণ করেছি। ১০৫টি উপজেলা ও ২৫টি জেলা কমিটি হয়েছে এনসিপির। এছাড়াও প্রতিটি উপজেলায় ২০০ জন সমর্থকের যে ফর্ম পূরণ করতে হয় এবং প্রতিটা জেলা ও উপজেলায় অফিস নিতে হয় সেটার অফিসিয়াল চুক্তির কাগজ, গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছি।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে দলের গঠনতন্ত্র আগের দিন তাদের সাধারণ সভায় পাশ হয়েছে, যা ইসির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো এনসিপির নির্বাচনমুখী প্রস্তুতিকে আরও জোরালো করেছে।

নির্বাচনী জোট এবং সংস্কার প্রক্রিয়া: নির্বাচনে জোট করার বিষয়ে জানতে চাইলে নাহিদ ইসলাম বলেন, “এখন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কারের একটি কার্যক্রম চলছে। ড. ইউনূস জাতির কাছে কমিটমেন্ট দিয়েছেন যে, জুলাই মাসের মধ্যে জুলাই সনদ হবে এই ঐকমত্যের ভিত্তিতে। ফলে আমাদের কাছে এখনো প্রধান প্রায়রিটি সংস্কার। সংস্কারের ওপর নির্ভর করে নির্বাচনের বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।” তার এই মন্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে এনসিপি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হতে আগ্রহী এবং নির্বাচনের কৌশল এই সংস্কারের ওপর নির্ভরশীল হবে। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

শাপলা প্রতীকের আইনি অবস্থান: শাপলা প্রতীক ব্যবহারের বিষয়ে আইনি জটিলতা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের আইনগুলো আমরা পর্যালোচনা করেছি। দেখেছি সে আইনগুলোতে এ ধরনের কোনো বাধা বা নিষেধ নেই। আমাদের প্রথম পছন্দ শাপলা। আশা করছি জনগণের মার্কা হিসেবে, গণঅভ্যুত্থানের মার্কা হিসেবে, গ্রাম বাংলার প্রতীক হিসেবে এনসিপি শাপলা পাবে।” তিনি আরও বলেন, “জাতীয় প্রতীক কেবল শাপলা নয়। শাপলা, ধানের শীষ, তারকা– এগুলো মিলিয়ে জাতীয় প্রতীক। সেক্ষেত্রে ধানের শীষ, তারকা বা তারা – এ দুটোও দুটি দলের মার্কা হিসেবে রয়েছে। ফলে সেক্ষেত্রে কোনো ধরনের আইনগত সমস্যা দেখি না।” নাহিদ ইসলামের এই ব্যাখ্যা প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রে আইনের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যার উপর জোর দেয়। তার দাবি, যেহেতু অন্যান্য জাতীয় প্রতীক যেমন ধানের শীষ (বিএনপি) এবং তারা (বাম দলসমূহ) ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেহেতু শাপলা প্রতীক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো আইনি বাধা থাকা উচিত নয়। তিনি উল্লেখ করেন, “নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। আমরা শাপলাকে মার্কা হিসেবে নিয়েছি। নদীমাতৃক বাংলাদেশের সবার কাছে পরিচিত শাপলা। সাধারণের দল হিসেবে আমরা শাপলাকে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিয়ে আবেদন করেছি।”

প্রবাসীদের ভোটাধিকার: বৈঠকে প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে নাহিদ ইসলাম জানান। তিনি বলেন, “আমরা জোর দাবি জানিয়েছি প্রবাসীদের ভোটাধিকার যেকোনো মূল্যে যেন রক্ষা হয়। এখনো ইসি সিদ্ধান্ত নেয়নি কোন প্রক্রিয়ায় হবে। দ্রুত সময়ে নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন।” প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার একটি দীর্ঘদিনের দাবি, যা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে আলোচনা চলছে। ইসির পক্ষ থেকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশ্বাস একটি ইতিবাচক দিক।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মন্তব্য: রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এনসিপির এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের ছোট দলগুলোর মধ্যে একটি নতুন প্রবণতা তৈরি করতে পারে, যেখানে তারা জাতীয় প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের পরিচিতি বাড়ানোর চেষ্টা করবে। যদিও শাপলা প্রতীকের বরাদ্দ এখনো নিশ্চিত হয়নি, তবে এই বিষয়ে নাহিদ ইসলামের আত্মবিশ্বাস দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়। যদি এনসিপি শাপলা প্রতীক পায়, তবে এটি তাদের নির্বাচনী প্রচারে একটি বাড়তি সুবিধা দেবে বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল এবং জনগণের কাছে একটি পরিচিত প্রতীক।

সামগ্রিকভাবে, নাহিদ ইসলামের এই ঘোষণা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন এবং রাজনৈতিক মেরুকরণে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এনসিপির নির্বাচনী প্রস্তুতি, সংস্কারের প্রতি তাদের অগ্রাধিকার এবং শাপলা প্রতীকের প্রতি তাদের আগ্রহ আসন্ন রাজনৈতিক গতিবিধির উপর প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, নির্বাচন কমিশন এনসিপির শাপলা প্রতীক ব্যবহারের আবেদনকে কীভাবে মূল্যায়ন করে এবং প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button