আঞ্চলিক

ময়মনসিংহের ফুলপুরে বাস-মাহিন্দ্রা সংঘর্ষে নিহত ৫

ময়মনসিংহ, ২০ জুন ২০২৫, রাত ৯:১৮: ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত এবং অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। শুক্রবার (২০ জুন) রাত ৮টার দিকে ফুলপুর পৌরসভার কাজিয়াকান্দা ইন্দিরাপাড় বাঁশবাড়ি এলাকায় হালুয়াঘাট থেকে ঢাকাগামী শ্যামলী বাংলা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে একটি মাহিন্দ্রার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলেই পাঁচজন প্রাণ হারান। দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। একই দিনে, ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায় আরেকটি সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন, যা এলাকায় উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

দুর্ঘটনার বিবরণ

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, শুক্রবার রাতে ফুলপুর-হালুয়াঘাট সড়কের কাজিয়াকান্দা ইন্দিরাপাড় এলাকায় শ্যামলী বাংলা পরিবহনের একটি বাস দ্রুতগতিতে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। বিপরীত দিক থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী মাহিন্দ্রার সঙ্গে বাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই প্রবল ছিল যে মাহিন্দ্রাটি মুহূর্তেই দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মাহিন্দ্রার পাঁচজন যাত্রী নিহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। আহত পাঁচজনকে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

ফুলপুর ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট রাত ৮:৩৫ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেল জানিয়েছে, উদ্ধারকাজ এখনও চলমান রয়েছে। তবে, স্থানীয় জনতার ক্ষোভের কারণে উদ্ধারকাজে কিছুটা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

বিক্ষুব্ধ জনতার প্রতিক্রিয়া

দুর্ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা বাসটিকে ঘিরে ফেলে এবং ঘাতক বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফায়ার সার্ভিসের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বিলম্ব হয়। এ ঘটনায় ফুলপুর-হালুয়াঘাট সড়কে যান চলাচল কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়, যা স্থানীয় যোগাযোগ ব্যবস্থায় সাময়িক বিঘ্ন সৃষ্টি করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং বাসটির চালককে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তবে, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, চালক ঘটনার পরপরই পালিয়ে গেছেন।

তারাকান্দায় আরেক দুর্ঘটনা

একই দিনে, ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কোধালধর বাজার এলাকায় আরেকটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যার আগে একটি অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হন। আহত তিনজনের মধ্যে একজন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ টিপু সুলতান জানান, নিহতদের মরদেহ থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে, এবং তাদের পরিচয় শনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপট

সাম্প্রতিক সময়ে ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনার হার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, এবারের ঈদুল আজহার আগে-পরে ১৫ দিনে সারাদেশে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত এবং ১১৮২ জন আহত হয়েছেন। এই দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল এবং অটোরিকশার সংঘর্ষ উল্লেখযোগ্য। ফুলপুর ও তারাকান্দার ঘটনা এই পরিসংখ্যানেরই অংশ, যা সড়ক নিরাপত্তার প্রশ্নকে আরও জোরালো করে তুলেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অতিরিক্ত গতি, চালকের অসতর্কতা, এবং সড়কের অবকাঠামোগত ত্রুটি এই ধরনের দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। ফুলপুরের দুর্ঘটনায় বাসের বেপরোয়া গতি এবং সম্ভবত রাস্তার সংকীর্ণতা দুর্ঘটনার তীব্রতা বাড়িয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ফুলপুর-হালুয়াঘাট সড়কের বেশ কিছু অংশে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়।

সমাজ ও প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

ফুলপুরের দুর্ঘটনার পর স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ জনতার বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা সড়ক দুর্ঘটনার পর জনগণের হতাশা ও রাগের প্রকাশ। এ ধরনের ঘটনা পূর্বেও শেরপুরে দেখা গেছে, যেখানে একটি বাস মোটরসাইকেল আরোহীকে চাপা দেওয়ার পর জনতা বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই প্রবণতা সড়ক নিরাপত্তা এবং জনগণের আস্থার ঘাটতির বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসে।

জেলা বাস মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গৌতম কুমার সাহা বলেন, “এ ধরনের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন। যারা জনরোষের সুযোগ নিয়ে বাসে আগুন দিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে বাস মালিকের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা উচিত।” তিনি সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

পুলিশ জানিয়েছে, ফুলপুরের ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারাকান্দার ঘটনায়ও একইভাবে আইনি প্রক্রিয়া চলছে। স্থানীয় প্রশাসন জনগণের ক্ষোভ প্রশমনের জন্য সড়কে নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

উপসংহার

ময়মনসিংহের ফুলপুর ও তারাকান্দার এই দুটি দুর্ঘটনা বাংলাদেশের সড়ক নিরাপত্তার দুর্বলতাকে পুনরায় সামনে এনেছে। এ ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র জানমালের ক্ষতি নয়, সমাজে অস্থিরতা ও অবিশ্বাসের সৃষ্টি করে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকার, প্রশাসন, এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। চালকদের প্রশিক্ষণ, সড়কের অবকাঠামো উন্নয়ন, এবং কঠোর ট্রাফিক আইন প্রয়োগ এই সমস্যা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সিগন্যালবিডি এই ঘটনায় নিহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button