আঞ্চলিক

করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও দুইজনের মৃত্যু

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১৮ জন। মঙ্গলবার (১৭ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো নিয়মিত করোনা বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মৃত দুইজনের মধ্যে একজন পুরুষ ও একজন নারী। তাদের মধ্যে একজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এবং অন্যজনের বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে। এ নিয়ে ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে মোট সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩১ জনে।

মৃত্যুর হার ও সংক্রমণের পরিস্থিতি

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে করোনা সংক্রমণের হার কিছুটা নিম্নমুখী থাকলেও হঠাৎ করেই আবার আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ, যা আগের সপ্তাহগুলোর তুলনায় খানিকটা বেশি।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গতকাল সোমবার (১৬ জুন) সকাল ৮টা থেকে আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত মোট ৩৭২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ১৮ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের এই হারকে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ‘উদ্বেগজনক’ না বললেও ‘সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা’ বলে মনে করছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে যাদের বয়স বেশি কিংবা আগে থেকেই জটিল রোগ রয়েছে, তাদেরকে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া এবং ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যারা এখনো টিকা নেননি বা বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেননি, তাদের দ্রুত টিকা নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এক বিবৃতিতে বলেন, “যদিও এখনকার সংক্রমণ হার তুলনামূলকভাবে কম, তবুও আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ভাইরাসটি কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই আবারও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।”

চিকিৎসা ব্যবস্থা ও প্রস্তুতি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সরকারি হাসপাতালগুলোর করোনা ইউনিটগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং প্রয়োজনে নতুন করে আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতেও প্রস্তুতি জোরদার করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিভাগের একজন চিকিৎসক বলেন, “আমরা রোগীর চাপ বাড়লে কীভাবে মোকাবিলা করব, তার পরিকল্পনা আগে থেকেই তৈরি করে রেখেছি। তবে জনসচেতনতা না থাকলে যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে।”

নতুন উপধরনের সম্ভাবনা ও নজরদারি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন ধরনের করোনা উপধরন (সাব-ভেরিয়েন্ট) শনাক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশেও এসব ভেরিয়েন্ট ঢুকে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এজন্য আন্তর্জাতিক যাত্রীদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিমানবন্দরগুলোতে থার্মাল স্ক্যানিং ও র‍্যাপিড টেস্টের ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, নতুন শনাক্ত হওয়া ১৮ জনের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে, যাতে ভাইরাসটির ধরন শনাক্ত করা যায়।

করোনা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ

কয়েক মাস ধরে করোনা সংক্রান্ত খবর শিরোনামে না থাকলেও হঠাৎ করে মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় জনমনে আবারও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষ জানতে চায়, আবারও কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত কিংবা বাজারে বিধিনিষেধ আসছে?

সরকারি পর্যায় থেকে এখনো কোনো লকডাউন বা কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়নি। তবে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, “আমরা প্রতিদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি বুঝে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

অতীত অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যতের করণীয়

করোনা ভাইরাস ২০২০ সালের মার্চে দেশে প্রথম শনাক্ত হয়েছিল। এরপর থেকে নানা ঢেউয়ের মধ্য দিয়ে দেশটি অতিবাহিত হয়েছে দীর্ঘ এক মহামারি সময়কাল। স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন, অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অনেক প্রিয়জনকে হারিয়েছে মানুষ। সেই অভিজ্ঞতা থেকে এখন সবাই চায় আগেভাগেই সতর্ক হতে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ভাইরাস সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি, বরং এটি এখন ‘এনডেমিক’ বা স্থানীয় রোগে পরিণত হয়েছে। তাই এই ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে জনসচেতনতা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, এবং টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা জরুরি।

উপসংহার

বর্তমানে সংক্রমণের যে হালকা ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে, তা মহামারির মতো বড় সংকটে রূপ নেবে কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে সতর্কতা অবলম্বন, স্বাস্থ্যবিধি পালন এবং সরকার ঘোষিত দিকনির্দেশনা মেনে চলা—এই তিনটি পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button