২৪ ঘণ্টায় আরও ১৫ জনের করোনা শনাক্ত

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) নতুন করে ১৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে ১৩৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়, যার মধ্যে ১৫ জনের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে স্বস্তির বিষয় হলো, এই সময়ে করোনায় কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। একই সঙ্গে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ জন করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন, যার ফলে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা এখন ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৯৮ জনে পৌঁছেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২৯ হাজার ৫০০ জন। এছাড়া, দেশে মোট করোনা শনাক্তের হার ১৩.৫ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ৯৮.৪২ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানগুলো দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সক্ষমতা এবং জনগণের সচেতনতার প্রতিফলন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ১১ নির্দেশনা
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদফতর গত বুধবার (১১ জুন) ১১টি নির্দেশনা জারি করেছে। এই নির্দেশনাগুলো জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. জনসমাগম এড়িয়ে চলা: যথাসম্ভব জনাকীর্ণ স্থানে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করুন।
২. মাস্কের ব্যবহার: শ্বাসতন্ত্রের রোগ থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক পরিধান করুন।
৩. হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার: হাঁচি বা কাশির সময় নাক-মুখ টিস্যু বা বাহু দিয়ে ঢেকে রাখুন।
৪. টিস্যু নিষ্পত্তি: ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিনে ফেলুন।
৫. হাত পরিষ্কার রাখা: সাবান ও পানি বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড হাত ধুয়ে ফেলুন।
৬. চোখ-নাক-মুখ স্পর্শ না করা: অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করবেন না।
৭. আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়ানো: আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।
এছাড়া, সন্দেহজনক রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যেমন:
- জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট হলে বাড়িতে থাকা এবং সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাইরে না যাওয়া।
- রোগী ও তাদের সেবাদানকারীদের মাস্ক ব্যবহার করা।
- প্রয়োজনে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করা বা আইইডিসিআর (০১৪০১-১৯৬২৯৩) এবং স্বাস্থ্য বাতায়ন (১৬২৬৩) নম্বরে ফোন করা।
করোনা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম কেস শনাক্ত হয় ২০২০ সালের মার্চ মাসে। এরপর থেকে দেশে ভাইরাসটির বিভিন্ন তরঙ্গ দেখা গেছে। সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ, টিকাদান কর্মসূচি এবং জনগণের সহযোগিতার কারণে করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বিবেচনায় স্বাস্থ্য অধিদফতর জনগণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার সংক্রমণ কমলেও এটি এখনো পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং টিকার বুস্টার ডোজ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, শীত মৌসুমে শ্বাসতন্ত্রের রোগ বৃদ্ধির প্রবণতা থাকায় এ সময়ে মাস্ক ব্যবহার এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সরকারের পদক্ষেপ ও জনগণের দায়িত্ব
সরকারের পক্ষ থেকে করোনা মোকাবিলায় নিয়মিত পরীক্ষা, চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধি এবং সচেতনতামূলক প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট ইউনিট এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম মজুদ রাখা হয়েছে। এছাড়া, আইইডিসিআর এবং স্বাস্থ্য বাতায়নের হটলাইন নম্বরগুলো সার্বক্ষণিক সেবা দিচ্ছে।
তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু সরকারের পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়। জনগণের সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমেই করোনার সংক্রমণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বিশেষ করে, জনাকীর্ণ স্থানে মাস্ক ব্যবহার, হাত পরিষ্কার রাখা এবং সন্দেহজনক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরিমর্শ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনার নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হলে তা দ্রুত পরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। এছাড়া, টিকাদান কর্মসূচির আওতায় বুস্টার ডোজ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। জনগণকে বিনামূল্যে টিকা গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, যা করোনার বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনার সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী কমলেও সতর্কতা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও একই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গুজব বা ভুল তথ্যে কান না দেওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উপসংহার
বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ কমে আসলেও এর থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি এখনো মেলেনি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা এবং সরকারের পদক্ষেপের পাশাপাশি জনগণের সচেতনতাই পারে এই মহামারিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে। মাসক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা এবং টিকা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা সবাই নিরাপদ থাকতে পারি। সিগনালবিডি জনগণকে সঠিক তথ্য জানানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছে।