মসজিদে ঢুকে পড়া বাস কেড়ে নিল বাবা-ছেলের প্রাণ

ঈদের আনন্দে পরিবার নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ঘটে গেল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। শুক্রবার (৬ জুন ২০২৫) সকাল ৭টার দিকে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার তালদীঘি এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে একটি মসজিদে ঢুকে পড়ে। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান বাবা পারভেজ মিয়া (৪০) এবং তাঁর ৮ বছর বয়সী ছেলে। আহত হয়েছেন অন্তত আরও ১৫ জন যাত্রী।
নিহত পারভেজ মিয়া নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় গ্রামের বাসিন্দা। তিনি একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন। ঈদের ছুটি কাটাতে পরিবার নিয়ে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে যাচ্ছিলেন।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা যায়, বাসটির সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে গেছে। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাসটি হঠাৎ করেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের ফকিরবাড়ি জামে মসজিদে ঢুকে যায়। ওই সময় মসজিদে কেউ না থাকায় ভেতরে আর কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
বাসটির তথ্য:
তিশা পরিবহনের এই বাসটি মূলত ঢাকা-কুমিল্লা রুটে চলাচল করলেও ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত চাহিদার কারণে হালুয়াঘাট রুটে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। দুর্ঘটনার সময় পারভেজ মিয়া ও তাঁর ছেলে বাসের সামনের দিকে বসা ছিলেন, যা তাঁদের মৃত্যু ত্বরান্বিত করে।
পুলিশের বক্তব্য:
তারাকান্দা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) লিটন চন্দ্র পাল বলেন, “বাসের চালক হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সে কারণে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মসজিদের ভেতরে ঢুকে যায়।” তিনি আরও জানান, “নিহতদের মরদেহ থানায় আনা হয়েছে এবং আহতদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।” দুর্ঘটনার পর চালক ও সহকারী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছেন। বাসটিকে জব্দ করা হয়েছে।
আহতদের অবস্থা:
আহত ১৫ জন যাত্রীর মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসাধীন রয়েছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া:
তালদীঘি এলাকার স্থানীয়রা জানান, বাসটির গতি অত্যন্ত বেশি ছিল। দুর্ঘটনার শব্দে এলাকার মানুষ দৌড়ে আসে। তারা নিজেরাই উদ্ধার কাজে হাত লাগান এবং পুলিশ ও অ্যাম্বুলেন্সকে খবর দেন। ঈদের আনন্দের মুহূর্তে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া ফেলেছে।
পরিবারের করুণ চিত্র:
পারভেজ মিয়ার পরিবারের সদস্যরা দুর্ঘটনার খবর শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁর স্ত্রী ও ছোট সন্তানরা এখনো দুর্ঘটনার মানসিক আঘাত থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, পারভেজ একজন দায়িত্বশীল ও সদালাপী মানুষ ছিলেন। সন্তানদের ভালো ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতেন তিনি।
দুর্ঘটনার পেছনে যেসব কারণ:
১. অতিরিক্ত গতি। ২. চালকের ঘুম বা অসাবধানতা। ৩. ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত রুটে বাস চলাচল করা। ৪. পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা।
প্রশাসনের দায়িত্ব:
এই দুর্ঘটনা আবারও প্রশ্ন তোলে বাংলাদেশের সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। প্রতি ঈদেই এমন দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চালকদের বিশ্রাম, যানবাহনের মান নিয়ন্ত্রণ এবং পুলিশি তদারকি আরও বাড়াতে হবে।
ঈদের আনন্দের সময় এমন করুণ মৃত্যুর ঘটনা শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো জাতির হৃদয়ে দাগ কেটে যায়। পারভেজ মিয়া ও তাঁর ছোট সন্তানের মৃত্যু দেশের সড়ক ব্যবস্থার ভয়াবহ বাস্তবতাকেই সামনে নিয়ে আসে। প্রশাসন ও পরিবহন কর্তৃপক্ষের উচিত এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।