২৪ ঘণ্টায় ৯ জনের করোনা শনাক্ত

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার আবারও কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ৪০টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ৯ জনের শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ, যা দেশে সাম্প্রতিক সময়ে পর্যবেক্ষিত হারের তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকেলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। এতে বলা হয়, মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭২৯ জনে।
শনাক্তের হার ও নমুনা পরীক্ষার চিত্র
করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর থেকে দেশে ধারাবাহিকভাবে নমুনা পরীক্ষা এবং রোগী শনাক্তকরণ কার্যক্রম চালু রয়েছে। তবে সম্প্রতি পরীক্ষার সংখ্যা অনেক কমে গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে সর্বমোট মাত্র ৪০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়, যা সাধারণ সময়ের তুলনায় অত্যন্ত কম। এর মধ্যে ৯ জনের রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ এসেছে, যার অর্থ প্রতিটি চারজন পরীক্ষার্থীর মধ্যে একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন কম সংখ্যক পরীক্ষায় যদি শনাক্তের হার এত বেশি হয়, তাহলে এটা ইঙ্গিত দেয় যে, করোনাভাইরাস হয়তো সমাজের ভিতরে এখনো নিঃশব্দে বিস্তার ঘটাচ্ছে।
মোট আক্রান্ত, সুস্থ এবং মৃতের পরিসংখ্যান
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত দেশে মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭২৯ জন।
একই সময়ে সুস্থ হয়েছেন আরও ২ জন। ফলে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৫৪ জনে।
সুখবর হলো, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে কেউ মারা যাননি। ফলে মৃতের মোট সংখ্যা ২৯ হাজার ৪৯৯ জনেই স্থির রয়েছে।
দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি
যদিও সংক্রমণের হার কিছুটা বাড়ছে, তবুও সামগ্রিক চিত্র এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীর সংখ্যা কম, তীব্র উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যাও খুব কম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশে বর্তমানে বেশিরভাগ করোনা রোগীর উপসর্গ মৃদু এবং তারা বাসায় থেকেই সুস্থ হয়ে উঠছেন। তবে সংক্রমণ বৃদ্ধির হার একেবারে অবহেলার পর্যায়ে নয়।
বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে বলেন, করোনাভাইরাস এখনও পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। বরং এটি মাঝেমধ্যেই সংক্রমণ বাড়িয়ে আবার কমে আসে, যেটাকে ‘এন্ডেমিক ওয়েভ’ বলা হয়ে থাকে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সতর্কতা এখনো জরুরি।
সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জনসাধারণকে এখনো সতর্ক থাকতে বলছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার, নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং জনসমাগমপূর্ণ স্থানে মাস্ক পরিধান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
বিশেষ করে যাদের বয়স বেশি, যাদের দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা রয়েছে (যেমন—ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ), তাদের অধিক সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
টিকা নেওয়ার গুরুত্ব
বর্তমানে দেশে করোনার টিকার পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও অনেক মানুষ এখন আর টিকা নিচ্ছেন না বা বুস্টার ডোজ গ্রহণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনার সংক্রমণ রোধে টিকাই সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার। যেসব নাগরিক এখনো বুস্টার ডোজ নেননি বা যাদের টিকার মেয়াদ শেষ হয়েছে, তাদের দ্রুত টিকা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ করণীয়
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস এখন একটি নিয়ন্ত্রিত মহামারি। যদিও কিছু দেশ বা অঞ্চলে মাঝে মাঝে সংক্রমণ বাড়ে, তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, টিকা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার কারণে প্রাণঘাতী প্রভাব অনেকটাই কমে এসেছে।
তবে তারা সতর্ক করেছে, ভাইরাসটি তার জিনগত গঠনে পরিবর্তন এনে মাঝে মাঝে নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি করতে পারে, যেগুলো আবার সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বাড়াতে পারে।
বাংলাদেশে এখনো সক্রিয়ভাবে ভাইরাসের জেনোম সিকোয়েন্সিং হচ্ছে না। ফলে নতুন ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি নির্ধারণ কঠিন হয়ে পড়ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
এ বিষয়ে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
উপসংহার
করোনাভাইরাস দীর্ঘ সময় ধরে মানুষের জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। বর্তমানে সংক্রমণের হার কম হলেও তা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি।
জনস্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে জনগণের মধ্যে সচেতনতা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, টিকা গ্রহণ এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অভ্যাস চালিয়ে যাওয়া জরুরি।
বিশ্বজুড়ে যেখানে করোনা নিয়ন্ত্রণে এলেও এর চূড়ান্ত অবসান হয়নি, সেখানে বাংলাদেশে সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করাই হবে সময়োচিত সিদ্ধান্ত।