বাংলাদেশ

ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পক্ষে জাতিসংঘ: গোয়েন লুইস

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস। আলোচনায় তিনি আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরে বলেন, জাতিসংঘ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের পক্ষে রয়েছে। তিনি মনে করেন, এই নির্বাচন দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বৈঠকের বিস্তারিত

বৃহস্পতিবার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রাধিকার, সংস্কার কর্মসূচি এবং আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
গোয়েন লুইস নির্বাচনের প্রসঙ্গে বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা অব্যাহত রাখবে। অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলছে। অতীতের নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ ছিল ভোটের স্বচ্ছতা, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ঘিরে। এ প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের অবস্থান সবসময়ই ছিল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সহায়তা করা এবং অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা।
২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক মহল স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। তাই এবার জাতিসংঘের আগাম সহায়তার ঘোষণা বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশের জন্য ইতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা ইস্যু ও মানবিক সহায়তা

বৈঠকে শুধু নির্বাচন নয়, রোহিঙ্গা সংকটও বিশেষভাবে আলোচিত হয়। উভয় পক্ষ মানবিক সহায়তার ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের টেকসই সমর্থন এখন জরুরি। তিনি তহবিল সংকট নিরসনে জাতিসংঘ ও অন্যান্য দাতাগোষ্ঠীর সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
গোয়েন লুইসও একমত হয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়া বড় ধরনের মানবিক সংকট ডেকে আনতে পারে।

জাতিসংঘের সমর্থন ও প্রতিশ্রুতি

গোয়েন লুইস বাংলাদেশ সরকারের সংস্কার ও রূপান্তর প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘ দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন ও টেকসই সমৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে।
তিনি আরও যোগ করেন, “জাতিসংঘ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের পক্ষে। এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সম্ভাব্য প্রভাব

বিশ্লেষকদের মতে, জাতিসংঘের প্রকাশ্য সমর্থন নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক আস্থার বার্তা দেবে। এটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা উন্নয়নের অন্যতম শর্ত।
অন্যদিকে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এই সমর্থনকে কিভাবে গ্রহণ করবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। কেউ কেউ বলছেন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা থাকলেও যদি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা না থাকে তবে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করা কঠিন হবে।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতিসংঘের এই অবস্থান নির্বাচন কমিশন ও সরকারের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে যাতে তারা নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে পারে।
একজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ বলেন, “জাতিসংঘের সমর্থন যেমন ইতিবাচক, তেমনি এটি সরকারের জন্য একটি দায়িত্বও তৈরি করছে। এখন বিশ্ব তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের দিকে।”

সংক্ষিপ্তসার

জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইসের মন্তব্য বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে আন্তর্জাতিক সমর্থনের গুরুত্ব আরও বাড়িয়েছে। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে কি না, সেটি এখন মূল প্রশ্ন। তবে জাতিসংঘের অঙ্গীকার স্পষ্ট—তারা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষে সবধরনের সহযোগিতা দেবে।

এম আর এম – ১১৮৬, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button