মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড সংলগ্ন কুড়াতলী বাজারে একটি রিকশা গ্যারেজ এবং তৎসংলগ্ন টিনশেডের বাসাবাড়িতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সন্ধ্যা ৭টা ৩৮ মিনিটে আগুনের খবর পাওয়ার পর থেকেই ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। আগুনের তীব্রতা বেশি থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়দের মতে, ঘনবসতিপূর্ণ এবং ঘিঞ্জি এলাকায় হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক হতে পারে।
অগ্নিকাণ্ডের বিস্তারিত: ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতা
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার খালেদা ইয়াসমিন জানান, রাত ৭টা ৩৮ মিনিটে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকার কুড়াতলী বাজারে অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিটটি ৭টা ৫৮ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ শুরু করে। পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্রুত আরও ইউনিট মোতায়েন করা হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ফায়ার সার্ভিসের মোট চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে আগুন নেভানোর কাজ করছে। এর মধ্যে দুটি ইউনিট প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করেছিল, পরবর্তীতে আরও দুটি ইউনিট তাদের সাথে যোগ দেয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে আগুনকে অন্যান্য স্থাপনায় ছড়িয়ে পড়া থেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক ও পুলিশ সদস্যরাও উদ্ধার ও নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করছেন।
অগ্নিকাণ্ডের স্থান ও ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক চিত্র
অগ্নিকাণ্ডের স্থানটি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এআইইউবি)-এর কাছাকাছি কুড়াতলী বাজারের ভেতরে। এটি মূলত টিনশেডের রিকশা গ্যারেজ এবং নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস করা ছোট ছোট টিনশেড ঘর দ্বারা গঠিত একটি ঘিঞ্জি এলাকা। এই ধরনের কাঠামোতে দাহ্য পদার্থের উপস্থিতি বেশি থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। গ্যারেজে রাখা বিপুল সংখ্যক রিকশা ও রিকশার যন্ত্রাংশ আগুনে পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া, রিকশা গ্যারেজের সঙ্গে লাগোয়া টিনশেড ঘরগুলোতে বসবাসকারী মানুষের আসবাবপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র পুড়ে গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আগুনের শিখা অনেক দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল এবং পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। তবে ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতায় আগুন নিয়ন্ত্রণের কাছাকাছি চলে এসেছে বলে জানা গেছে।
জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া ও যানজট
অগ্নিকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় ভিড় জমে যায়। এই সড়কটি ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত সড়ক হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এবং উৎসুক জনতার ভিড়ে সড়কের উভয় পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। কুড়িল বিশ্বরোড, বিশেষ করে বিমানবন্দর সড়কের দিকে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। স্থানীয় লোকজন আগুন নেভানোর কাজে সহায়তা করার চেষ্টা করলেও ভিড়ের কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কাজ করতে কিছুটা বেগ পেতে হয়। পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং ভিড় সরানোর কাজ করেন, যাতে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারে।
হতাহতের পরিসংখ্যান এবং জরুরি অবস্থা
প্রাথমিকভাবে এই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবে ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেহেতু রিকশা গ্যারেজের সঙ্গে লাগোয়া কিছু টিনশেড বাসাবাড়ি ছিল, তাই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রথমে সেখানে বসবাসকারীদের দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার দিকে মনোযোগ দেন। গ্যারেজের ভেতরে থাকা রিকশা চালক বা অন্য শ্রমিকদের মধ্যে কেউ আটকে আছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার জানান, আগুন পুরোপুরি নেভার পরই ভেতরে প্রবেশ করে ক্ষয়ক্ষতি ও সম্ভাব্য হতাহতের সঠিক তথ্য যাচাই করা সম্ভব হবে। ঘটনাস্থলে জরুরি চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞ মতামত ও সতর্কতা
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা শহরের ঘনবসতিপূর্ণ টিনশেড বস্তি বা গ্যারেজগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা প্রায় থাকেই না। দাহ্য পদার্থের আধিক্য এবং সংকীর্ণ রাস্তার কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছানোও কঠিন হয়। এই ধরনের স্থাপনাগুলোতে নিয়মিতভাবে অগ্নিনিরাপত্তা মহড়া এবং সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি। এছাড়া, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবহার বন্ধ করা এবং রান্নার কাজে সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করার জন্য স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকার কুড়াতলী বাজারে রিকশা গ্যারেজে লাগা ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডের স্থানটি ঘিঞ্জি হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই ঘটনা আবারও ঢাকা শহরের অপরিকল্পিত বসতি এবং দুর্বল অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার ঝুঁকিকে সামনে নিয়ে এলো। আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসার পর তদন্তের মাধ্যমে এর কারণ ও সঠিক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র উঠে আসবে।
এম আর এম – ২২৮৯,Signalbd.com



