বানিজ্য

জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কর্মসূচি স্থগিত

Advertisement

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) কর্তৃক অনির্দিষ্টকালের জন্য ঘোষিত জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায় সংগঠনটি। বাজুসের সহ-সভাপতি মো. রিপনুল হাসানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত একটি কথিত ভুয়া ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় আপাতত কর্মসূচি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

গ্রেফতার ও অভিযোগের প্রেক্ষাপট

সংগঠনের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৮ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার এলাকায় অবস্থিত মো. রিপনুল হাসানের নিজস্ব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সদস্যরা। গ্রেফতারের পর জানা যায়, একটি রাজনৈতিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে বাজুসের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, মো. রিপনুল হাসান কখনোই উক্ত রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না, এমনকি তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্যপদও গ্রহণ করেননি।

বাজুসের দাবি, মামলায় যে রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এটি একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ, যার মাধ্যমে একজন নিরীহ ব্যবসায়ীকে হয়রানির মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা করা হয়েছে।

সারাদেশে প্রতিবাদ ও ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি

এই গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে সারাদেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। ২৯ মে বৃহস্পতিবার সারাদেশের সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ সমাবেশ, মিছিল এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। তারা মো. রিপনুল হাসানের নিঃশর্ত মুক্তি ও ন্যায়বিচার দাবিতে একত্রিত হন।

বাজুসের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, “দেশজুড়ে ব্যবসায়ীদের এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমরা সবাইকে ধন্যবাদ জানাই যারা জুলুমের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।”

কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা ও কারণ

ঈদুল আজহার মতো একটি বড় ধর্মীয় উৎসবকে সামনে রেখে এবং প্রশাসনের প্রতি আস্থার জায়গা রেখে আপাতত জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আমরা আশাবাদী, এই বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরপেক্ষ বিচার হবে এবং আমাদের সহ-সভাপতির বিরুদ্ধে আনা ভিত্তিহীন অভিযোগ প্রত্যাহার করা হবে।”

বাজুস আরও জানিয়েছে, তারা প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা, বাণিজ্য উপদেষ্টা, শিল্প উপদেষ্টা, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আশা করা হচ্ছে, তারা এ বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে ব্যবস্থা নেবেন।

আগামীকাল থেকে স্বাভাবিক কার্যক্রম

এই পরিস্থিতিতে বাজুস দেশজুড়ে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের আগামীকাল শুক্রবার (৩০ মে) থেকে পুনরায় প্রতিষ্ঠান খোলার অনুরোধ জানিয়েছে। “আমরা ব্যবসায়িক স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে চাই, তবে একই সঙ্গে বিচার প্রক্রিয়ার ওপর নজর রাখছি,”—বলেন বাজুসের এক মুখপাত্র।

তবে বাজুস স্পষ্ট করে জানিয়েছে, যদি মো. রিপনুল হাসানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না করা হয় কিংবা যদি ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচি নিতে তারা বাধ্য হবে।

ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা ও প্রশাসনের করণীয়

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ব্যবসায়ীরা একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন—“এই রাষ্ট্রে একজন নিরপরাধ ব্যবসায়ী কি সত্যিই নিরাপদ?” ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, একজন নিরপেক্ষ ও অরাজনৈতিক ব্যবসায়ী যদি এভাবে হয়রানির শিকার হন, তাহলে দেশের অর্থনৈতিক খাতের উপর এর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বিশেষ করে ঈদুল আজহা ঘিরে দেশের স্বর্ণের বাজারে যে চাঙ্গাভাব সৃষ্টি হয়, সেই সময়ে একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতার গ্রেফতার পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে। প্রশাসনের দায়িত্ব হবে, ব্যবসায়ীদের এই আস্থাহীনতা দূর করে তাদের পাশে দাঁড়ানো, যাতে দেশের স্বর্ণ শিল্প ও অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি এই খাত ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

পরিশেষে

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক সংগঠন। তাদের এই সিদ্ধান্ত, যা একটি বৃহৎ ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সম্মিলিত ক্ষোভ ও প্রত্যাশার প্রতিফলন—তা প্রশাসন ও দায়িত্বশীল মহলের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে প্রশাসন যদি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তবে সেটি হবে দেশের ব্যবসায়-বান্ধব পরিবেশ তৈরির পথে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button