আঞ্চলিক

সুন্দরবন তীরে চর দখল করে গড়া রিসোর্ট গুঁড়িয়ে দিলো প্রশাসন

Advertisement

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মৌখালী এলাকায় সুন্দরবনের তীর ঘেঁষে মালঞ্চ নদীর চর দখল করে গড়ে তোলা একটি অবৈধ রিসোর্ট উচ্ছেদ করেছে প্রশাসন। রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে এই উচ্ছেদ অভিযান।

স্থানীয় প্রশাসন জানায়, সরকারি নির্দেশ অমান্য করে চর দখল করে পর্যটনকেন্দ্র ও রিসোর্ট নির্মাণ করেছিলেন এক ব্যবসায়ী। বারবার সতর্কবার্তা দেওয়ার পরও অবৈধ স্থাপনা না সরানোয় শেষ পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে সেটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন কারা

অভিযানে নেতৃত্ব দেন মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা সঞ্জয় রায়। তার সঙ্গে ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর উপসহকারী প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম, বন বিভাগের মুন্সিগঞ্জ টহল ফাঁড়ির ফরেস্টার ফাইয়াজুর রহমান এবং নীলডুমুর ট্যুরিস্ট পুলিশের এসআই সুজিত সরকার।

ভূমি কর্মকর্তা সঞ্জয় রায় বলেন, “নদীর চর বা তীরবর্তী এলাকায় ব্যক্তিগতভাবে স্থাপনা নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। কয়েকবার নোটিশ দেওয়ার পরও তা মানা হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে।”

ব্যবসায়ীর পরিচয় ও রিসোর্ট নির্মাণের ইতিহাস

জানা গেছে, খুলনার বাসিন্দা মাহবুব আলম ‘এ অ্যান্ড এন ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস’ নাম ব্যবহার করে রিসোর্ট ও ট্যুরিস্ট পয়েন্টটি গড়ে তোলেন। স্থানীয়ভাবে তিনি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নানা ধরনের প্রচারণাও চালান।

প্রথমে ছোট আকারে ট্যুরিস্ট পয়েন্ট শুরু করলেও পরে চর দখল করে রিসোর্টের সম্প্রসারণ করেন তিনি। প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ করা হয় কটেজ, রেস্টুরেন্ট এবং নৌবিহারের জন্য কাঠামো।

পূর্বে দেওয়া সতর্কতা উপেক্ষা

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, অবৈধ স্থাপনা সরাতে উদ্যোক্তাকে সাত দিনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল। তবে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে রিসোর্টের কোনো অংশ সরানো হয়নি। ফলে নির্ধারিত দিনেই প্রশাসন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়।

উপসহকারী প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম বলেন, “সরকারি জমি ও নদীর জায়গা দখল করে কোনো স্থাপনা টেকসই হয় না। আমরা যথেষ্ট সময় দিয়েছি, কিন্তু তারা সহযোগিতা করেনি। এজন্যই উচ্ছেদ করতে হয়েছে।”

সুন্দরবন ও পরিবেশ রক্ষার দৃষ্টিকোণ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এবং দেশের প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদ। এর আশেপাশে অবৈধভাবে পর্যটনকেন্দ্র ও রিসোর্ট গড়ে উঠলে পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। নদীর চর দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পরিবেশবাদীরা মনে করেন, এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম রোধে নিয়মিত তদারকি জরুরি। প্রশাসন যদি কঠোর অবস্থান নেয়, তবে ভবিষ্যতে আর কেউ সুন্দরবনের ক্ষতি করে ব্যবসা গড়ে তুলতে পারবে না।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

উচ্ছেদ অভিযানের পর স্থানীয় বাসিন্দারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, নদীর জায়গা বাঁচাতে এ পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি ছিল।

একজন স্থানীয় জেলে বলেন, “আমরা প্রতিদিন নদীতে যাই মাছ ধরতে। এই রিসোর্টের কারণে নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। এখন জায়গা খালি হওয়ায় আমরা স্বস্তি পেয়েছি।”

আইনি অবস্থান ও প্রশাসনের বার্তা

ভূমি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারি জমি বা নদীর চর দখল করে স্থাপনা নির্মাণ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রয়োজনে এ ধরনের উদ্যোগের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।

অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা আরও জানান, শুধু এই একটি রিসোর্ট নয়, এলাকায় আরও যেসব অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সেগুলোও পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হবে।

পর্যটন ও টেকসই উন্নয়ন

বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা দিন দিন বাড়ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে হবে। অনুমোদন ছাড়া চর দখল করে স্থাপনা গড়ে তোলা টেকসই পর্যটনের পরিপন্থী।

ট্যুরিজম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার যদি সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় পর্যটন উন্নয়নের পরিকল্পনা নেয়, তবে তা অবশ্যই পরিবেশসম্মত হতে হবে। বেসরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ হলেও তা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী করতে হবে।

ভবিষ্যতের করণীয়

সুন্দরবন তীরবর্তী এলাকায় অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠা নতুন কিছু নয়। অতীতে একাধিকবার প্রশাসন অভিযান চালিয়েছে। তবে নিয়মিত তদারকির অভাবে আবারও একই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

স্থানীয়রা চান, প্রশাসন যেন স্থায়ী নজরদারি ব্যবস্থা নেয় এবং একইসঙ্গে পরিবেশবান্ধব পর্যটন উদ্যোগকে সহায়তা করে। তবেই সুন্দরবনকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

এম আর এম – ১০১৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button