বিশ্ব

ত্রাণ নিতে যাওয়া গাজাবাসীর ওপর মরিচের গুড়া ছিটালো ইসরায়েল

Advertisement

 গাজার রাফা শহরের শাকুশ এলাকায় ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর মরিচের গুঁড়ার স্প্রে ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে ইসরায়েলি সেনারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও থেকে উঠে এসেছে এ নির্মম ঘটনার চিত্র, যা বিশ্বজুড়ে নিন্দা ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

ঘটনাস্থলে কী ঘটেছে?

গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফা শহরের শাকুশ এলাকায় বিতর্কিত ত্রাণ সংস্থা জিএইচএফ পরিচালিত একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে হাজারো ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি জড়ো হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন নারী, পুরুষ ও শিশু। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা এসেছিলেন খাবার সংগ্রহে।

তবে ত্রাণ সংগ্রহ করতে এসে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন তারা। মোবাইলে ধারণ করা ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তিনজন সশস্ত্র ইসরায়েলি সেনা মরিচের গুঁড়ার স্প্রে ব্যবহার করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করছেন। ভিডিওটি ১০ জুলাই ধারণ করা হলেও তা প্রকাশ পায় ২০ জুলাই রাতে।

ছবিতে দেখা যায়, মরিচের গুঁড়ার কারণে অনেকে চোখ-মুখ ঢেকে দৌঁড়ে পালাচ্ছেন। কেউ পিঠে ময়দার বস্তা নিয়ে ছুটছেন, কেউ হাঁপাতে হাঁপাতে আশ্রয় খুঁজছেন। মানবিক ত্রাণ পেতে গিয়ে এমন পৈশাচিক নিপীড়নের শিকার হওয়া গাজাবাসীদের দৃশ্য মনকে ভারাক্রান্ত করে।

ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণহানি

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, মে মাসের শেষ থেকে বিতর্কিত জিএইচএফ সংস্থার কার্যক্রম শুরুর পর থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন অন্তত ৮৯১ জন ফিলিস্তিনি। জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মধ্যে ৬৭৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে ত্রাণকেন্দ্রের আশপাশেই।

গত রোববার ইসরায়েলি হামলায় আরও ৮৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাঁদের মধ্যে ৭৩ জনই ছিলেন ত্রাণ সংগ্রহে জড়ো হওয়া সাধারণ মানুষ। এর আগের দিন, শনিবার গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে চালানো হামলায় প্রাণ হারান ১১৬ জন, যাঁদের মধ্যে ৩৮ জন ছিলেন ত্রাণপ্রত্যাশী।

আগেও ঘটেছে এমন সহিংসতা

এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আগেও গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েলের পূর্ণ অবরোধের কারণে খাদ্য সংকট চরমে উঠেছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে চলে গেছে। মানুষ বাধ্য হয়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটছে ত্রাণ সংগ্রহে।

বিশেষ করে শিশুদের খাবার জোগাড় করতে গিয়ে বহু মা-বাবা প্রাণ হারিয়েছেন। তবুও তাঁরা জানেন, ত্রাণ না নিতে পারলে সন্তানদের না খেয়ে মরতে হবে। তাই মৃত্যুঝুঁকি নিয়েও তাঁরা ত্রাণকেন্দ্রে যাচ্ছেন।

ভিডিওর সত্যতা ও বিশ্ব প্রতিক্রিয়া

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি সত্য বলে নিশ্চিত করেছে আল-জাজিরার ফ্যাক্ট-চেকিং ইউনিট ‘সানাদ’। তারা জানিয়েছে, ঘটনাটি রাফার শাকুশ এলাকায় ঘটেছে এবং ইসরায়েলি সেনারা মরিচের গুঁড়ার স্প্রে ছুড়েছে জনতার ওপর।

এই ভিডিও সামনে আসার পর আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ ঘটনাকে অমানবিক, নির্মম ও যুদ্ধাপরাধের শামিল বলে অভিহিত করছে। তবে এখনও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।

বিশেষজ্ঞ মতামত ও বিশ্লেষণ

গাজার দেইর আল-বালাহ শহর থেকে আল-জাজিরার প্রতিনিধি হিন্দ খোদারি জানান, “ইসরায়েল যদি গাজায় আরও খাবার প্রবেশ করতে না দেয়, তাহলে ফিলিস্তিনিদের সামনে খাবারের জন্য জীবন ঝুঁকিতে ফেলা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না।”

বিশ্লেষকদের মতে, গাজায় চলমান অবরোধ শুধু মানবিক বিপর্যয়ই ডেকে আনছে না, এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ। জাতিসংঘ-নেতৃত্বাধীন ত্রাণ কার্যক্রমকে পাশ কাটিয়ে বিতর্কিত ত্রাণ সংস্থা দিয়ে সরবরাহ চালানোর ফলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হচ্ছে।

শিশুদের করুণ পরিণতি

ত্রাণ না পেয়ে প্রতিনিয়ত অনাহারে মারা যাচ্ছে শিশুরা। গত রোববার গাজার আল-আকসা মার্টায়ার হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চার বছর বয়সী শিশু রাজান আবু জাহের অপুষ্টি ও অনাহারের কারণে মারা গেছে। একই দিন আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক জানান, সেখানে আরও দুইজন অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন, যাঁদের মধ্যে একজন মাত্র ৩৫ দিন বয়সী নবজাতক।

এই পরিস্থিতি একটি ভয়ঙ্কর মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরছে, যেখানে শিশুদের জীবনও সুরক্ষিত নয়।

সারসংক্ষেপ  

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাদের মরিচের গুঁড়া ছিটানো একটি ঘটনা নয়, বরং এটি চলমান এক নিষ্ঠুর মানবিক সংকটের প্রতিচ্ছবি। যেখানেই মানুষ খাদ্যের জন্য ভিড় করছে, সেখানেই তাদের ওপর নেমে আসছে সহিংসতা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এ সংকটের দ্রুত সমাধানে একতাবদ্ধ ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেবে তা নির্ভর করছে পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার ওপর।

এম আর এম – ০৪৪৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button