ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা পর্যবেক্ষণে ঢাকা, দুই দেশকে শান্ত থাকার আহ্বান

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সশস্ত্র সংঘাতের প্রেক্ষিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। পরিস্থিতির অবনতি রোধে দুই প্রতিবেশী দেশকে শান্তিপূর্ণ আচরণ ও কূটনৈতিক সমাধানের পথে এগোতে আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বুধবার (৭ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশের উদ্বেগ ও কূটনৈতিক বার্তা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা যেন আরও বাড়তে না পারে, সে বিষয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন ঢাকা। এতে বলা হয়, “ঢাকা মনে করে, আঞ্চলিক শান্তি, সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সব পক্ষেরই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত। কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা চালানো উচিত।”
বাংলাদেশ সরকার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে যে, শেষ পর্যন্ত কূটনৈতিক প্রচেষ্টাই জয়ী হবে এবং দুই দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
ভারত-পাকিস্তান সংঘাত: পটভূমি
প্রসঙ্গত, ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মিরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। এ ঘটনায় দিল্লি সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং সীমান্তে উত্তেজনা বেড়ে যায়।
এই ঘটনার পর ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে। ৬ মে মধ্যরাতে চালানো এই অভিযানে ভারতের দাবি, তারা পাকিস্তানের মাটিতে একাধিক ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ ধ্বংস করেছে। এই হামলায় এখন পর্যন্ত শিশুসহ ২৬ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন আরও ৪৬ জন।
পাল্টা প্রতিক্রিয়া: পাকিস্তানের দাবি
এই হামলার জবাবে পাকিস্তানও কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ইসলামাবাদ দাবি করেছে, তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান এবং একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “দেশের আকাশসীমা রক্ষায় আমাদের বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক ও প্রস্তুত।”
স্থানীয় সূত্র মতে, ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মিরে তিনটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে। উত্তেজনার এই ধারা চলতে থাকলে দুই দেশের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মধ্যস্থতার চেষ্টা
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে ইরান ও রাশিয়া। দুই দেশই জানিয়েছে, তারা চায় এই অঞ্চলে যুদ্ধ নয়, শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো পক্ষই এই মধ্যস্থতা কার্যকরভাবে গ্রহণ করেছে বলে জানায়নি।
জাতিসংঘ থেকেও দুই দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয়েছে। ইউএন মহাসচিব এক বিবৃতিতে বলেন, “উভয় দেশকেই কূটনৈতিক সমাধানের পথ বেছে নিতে হবে। সামরিক পথ নয়, শান্তিই শেষ পর্যন্ত সকল পক্ষের জন্য কল্যাণকর হবে।”
বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ: শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতি অঙ্গীকার
বাংলাদেশ সবসময়ই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে কথা বলে আসছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত পুরো অঞ্চলের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, “বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব। কোনো ধরনের সামরিক উত্তেজনা এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য হুমকি।”
বাংলাদেশে জনমত ও বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত-পাকিস্তানের উত্তপ্ত পরিস্থিতি বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্যও উদ্বেগজনক। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবেই চায়, প্রতিবেশী দুই পরাশক্তি যেন সংঘাতের পথে না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছায়। কারণ এই সংঘাতের ছায়া বাংলাদেশের ওপরও পড়তে পারে—পরিবেশ, অর্থনীতি বা আঞ্চলিক নিরাপত্তার দিক থেকে।”
জনমতের দিক থেকেও বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ এই সংঘাতের খবর উদ্বেগের সঙ্গে অনুসরণ করছেন। বিশেষ করে দুই দেশের পরমাণু সক্ষমতা থাকায় পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তা গোটা অঞ্চলের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে, তা শুধু দুই দেশের মধ্যকার বিষয় নয়, বরং এটি পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রশ্ন। বাংলাদেশ সময়োচিতভাবে যে শান্তির আহ্বান জানিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখন দেখার বিষয়, প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্র এই সংকটের সমাধানে কী ধরনের কৌশল গ্রহণ করে এবং আন্তর্জাতিক মহলের আহ্বানে তারা কীভাবে সাড়া দেয়।