ঈদুল আজহার ছুটি ১০ দিন, অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে এবার সরকার ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। মঙ্গলবার (৬ মে) অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
সরকারি ঘোষণার পর দেশের কর্মজীবী মানুষের মধ্যে স্বস্তির অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি, অর্থনীতি, বাজারব্যবস্থা ও যাতায়াতব্যবস্থার ওপরও ছুটির প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঈদুল আজহার সম্ভাব্য তারিখ ও ছুটির সময়সীমা
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৫ সালের পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে ৬ বা ৭ জুনে। সে অনুযায়ী ছুটি শুরু হবে জুনের শুরু থেকেই। পুরো ছুটির সময়সীমা ১০ দিন হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কার্যক্রমে পরিবর্তন আসবে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ১৭ ও ২৪ মে যেহেতু শনিবার, সাধারণত ছুটির দিন হলেও তা এবার অফিসিয়ালি কর্মদিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যাতে করে মূল ঈদের সময়ে টানা দীর্ঘ ছুটি দেওয়া সম্ভব হয়।
পূর্ববর্তী ঈদের ছুটির ধারা: ঈদুল ফিতরের ৯ দিনের ছুটি
এর আগেও চলতি বছরের ঈদুল ফিতরে সরকার টানা ৯ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছিল। ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটি ছিল। তার আগে ২৬ মার্চ ছিল মহান স্বাধীনতা দিবসের ছুটি, ফলে প্রকৃতপক্ষে প্রায় টানা ১০ দিনের মতো ছুটির সুবিধা পেয়েছিল জনগণ।
ঈদুল ফিতরের অভিজ্ঞতা থেকেই সরকার এবার ঈদুল আজহার সময় আরও একদিন বেশি ছুটি ঘোষণা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ: ছুটির সুফল ও চ্যালেঞ্জ
১০ দিনের সরকারি ছুটি মানে একদিকে যেমন কর্মজীবীদের জন্য বিশ্রামের সুযোগ, তেমনি অর্থনীতিতে রয়েছে এর মিশ্র প্রভাব।
১. গার্মেন্টস ও শিল্প খাত:
বেশিরভাগ তৈরি পোশাক কারখানা ঈদের অন্তত ৭-৮ দিন বন্ধ রাখে। এবার ১০ দিনের ছুটি ঘোষণায় আগেভাগেই রপ্তানি আদেশ সম্পন্ন করে ছুটি কাটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে উৎপাদনে স্বল্পমেয়াদী বিরতি কিছু ক্ষতির কারণ হতে পারে।
২. ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান:
ঈদের ছুটির আগে ও পরে ব্যাংকে গ্রাহকদের ভিড় বাড়বে। মূল ছুটির দিনগুলোতে অর্থ লেনদেন পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। অনেক প্রতিষ্ঠান এখন থেকেই ডিজিটাল ট্রান্সফার ও এটিএম মেশিনে পর্যাপ্ত নগদ টাকার সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
৩. ব্যবসা ও খুচরা বাজার:
ঈদের আগে বিপণিবিতানগুলোয় কেনাকাটার চাপ থাকবে চূড়ান্ত পর্যায়ে। কোরবানির পশুর হাটেও ভিড় বেড়ে যাবে। যদিও কোরবানির ঈদের পর বাজার সাধারণত কয়েকদিন স্থবির থাকে।
যানজট ও যাতায়াত: মহাসড়কে চাপ সামলাতে প্রস্তুতি জরুরি
ঈদের ছুটির সময় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের যাত্রা বাড়ে ব্যাপক হারে। এবার ১০ দিনের ছুটি হওয়ায় অনেকেই ৩১ মে বা ১ জুন থেকেই গ্রামের পথে রওনা হবেন। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কগুলোয় তীব্র যানজট দেখা দিতে পারে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, হাইওয়ে পুলিশ ও বিআরটিএ এ নিয়ে আগেভাগেই প্রস্তুতি নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে।
ঈদ ব্যবস্থাপনায় সরকারের করণীয়: স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার দিকেও নজর
১০ দিনের দীর্ঘ ছুটিতে দেশের নানা প্রান্তে ভ্রমণ, পশুর হাট, কোরবানির কার্যক্রম, জনসমাগম ইত্যাদি বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকারকে জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার দিকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে।
বিশেষ করে কোরবানির পশুর হাটে পরিচ্ছন্নতা, প্রাণিসম্পদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, দালালমুক্ত বেচাকেনা এবং ডিজিটাল হাট ব্যবস্থাপনায় নজর দেওয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
জনমনে স্বস্তি, তবে চাকরিজীবীদের কিছু প্রশ্ন
ছুটি ঘোষণার পর সামাজিক মাধ্যমে চাকরিজীবীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। অনেকেই বলছেন, টানা ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর দারুণ সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন—১৭ ও ২৪ মে শনিবার অফিস খোলা থাকায় কর্মীদের ওপর বাড়তি চাপ পড়তে পারে।
একজন সরকারি চাকরিজীবী সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “ছুটি দীর্ঘ হলেও কর্মদিবস আগেই পুষিয়ে নেওয়ার যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেটা কার্যত কর্মীদের ওপর চাপ তৈরি করবে।”
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের অনুমোদনও গুরুত্বপূর্ণ খবর
উপদেষ্টা পরিষদের একই সভায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকার ২০২৫ সালের সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে। যদিও এর বিস্তারিত এখানেও উল্লেখ করা হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা, সামাজিক মাধ্যম ব্যবস্থাপনা এবং সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে চলেছে।
ছুটির মধ্যে সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার প্রত্যাশা
ঈদুল আজহার ১০ দিনের ছুটি দেশের জনগণের জন্য নিঃসন্দেহে আনন্দের খবর। তবে এই দীর্ঘ ছুটি যেন দেশের অর্থনীতি, পরিবহন ও জনসেবার উপর নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে, সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।
দেশবাসীর নিরাপদ ঈদযাত্রা, স্বাস্থ্যকর কোরবানি ও পরিবারে আনন্দময় উৎসব নিশ্চিত করাই এখন সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ।