বগুড়ায় চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা, দুই সদস্য গ্রেপ্তার

বগুড়ায় চাকরি দেওয়ার নামে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা চালিয়ে আসা একটি চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। শনিবার রাতে শহরের বড়গোলা টিনপট্টি ও শাকপালা এলাকায় এক অভিযানে এই প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ এবং সরকারি চাকরির সুযোগ দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
চক্রের মিথ্যা আশ্বাসে চাকরিপ্রত্যাশীরা প্রতারিত
বগুড়ার সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি বাহিনীতে চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে অনেক চাকরিপ্রত্যাশীকে জড়িয়ে পড়তে হয়েছিল প্রতারক চক্রের হাতে। চক্রটি চাকরি দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা গ্রহণ করত এবং পরে চাকরি না পাওয়ার পরও তাদের কাছ থেকে টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। এতে ভুক্তভোগীরা তাদের বিশ্বাস এবং অর্থ হারিয়েছেন।
অভিযানের সময় সাকিব মিয়া (১৮), যিনি শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা এলাকার বাসিন্দা, উদ্ধার হন। সাকিবকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে চক্রের সদস্যরা মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিল। তাকে উদ্ধার করার পাশাপাশি চক্রের অন্যান্য প্রতারণামূলক আলামতও উদ্ধার করা হয়, যার মধ্যে চাকরিপ্রত্যাশীদের শিক্ষাগত সনদ, ব্যাংক চেক, সই করা ফাঁকা স্ট্যাম্পসহ নানা প্রমাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আটক হওয়া দুই সদস্যের পরিচিতি
গ্রেপ্তার হওয়া দুই সদস্য হলেন বগুড়া শহরের শাকপালা এলাকার তাহের আলী (৪০) এবং বায়েজিদ মিয়া (৩৮)। এই দুই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে চাকরি দেওয়ার নামে বিভিন্ন তরুণ-তরুণীর কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী তাদেরকে আটক করে এবং পরে বগুড়া সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
চক্রের প্রতারণা ও কৌশল
প্রতারণার শিকার চাকরিপ্রত্যাশীদের দাবি, চক্রটি তাদের সাথে মোটা অঙ্কের অর্থের চুক্তি করত। এরপর চাকরির নিয়োগ নিশ্চিত করার নামে অর্ধেক টাকা নিয়ে ফেলত। চক্রটি এই অর্থ গ্রহণের পর চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে চাকরি প্রদান করা হয়নি। এমনকি চাকরিপ্রত্যাশীরা নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেলেও, চুক্তি অনুযায়ী প্রতারক চক্রের কাছে অর্থ প্রদান করতে বাধ্য হতেন।
এই চক্রটি সম্প্রতি পুলিশ কনস্টেবল এবং সেনাবাহিনীর সৈনিক নিয়োগের জন্য বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রত্যাশীকে তাদের ফাঁদে ফেলে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিল। তবে ওই চাকরিপ্রত্যাশীরা এখনও চাকরি পাননি।
অভিযান ও উদ্ধার
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত শনিবার রাতে সেনাবাহিনী বগুড়া শহরের টিনপট্টি এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালায়। সেখানে চাকরিপ্রত্যাশী সাকিব মিয়াকে উদ্ধার করে, এবং বায়েজিদ মিয়াকে আটক করা হয়। পরে, বায়েজিদ মিয়ার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শাকপালা এলাকায় আরও একটি অভিযান চালানো হয়, যেখানে চক্রের অপর সদস্য তাহের আলীকে আটক করা হয়।
প্রতারণার অভিযোগে মামলা
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দীন বলেন, “সেনাবাহিনীর অভিযানে আটক দুই সদস্যকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ওই মামলায় দুজনকেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।”
এছাড়া, পুলিশ জানিয়েছে, অভিযানে উদ্ধার হওয়া আলামতগুলো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও অনুরূপ প্রতারণার শিকার ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
প্রতারণার শিকার তরুণ-তরুণীরা কী করবেন?
এ ধরনের প্রতারণা থেকে বাঁচতে চাকরির জন্য আবেদনকারী ব্যক্তিদের উচিৎ সর্তকতা অবলম্বন করা। অনেক সময় একাধিক প্রতিষ্ঠান বা দপ্তর চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা চালায়, যেখানে চাকরিপ্রার্থীকে অর্থ প্রদানের জন্য চাপ দেওয়া হয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের অর্থের লেনদেন থেকে বিরত থাকা এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নেওয়া উচিত।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও প্রতারকদের হাত থেকে সাধারণ জনগণকে রক্ষা করতে সজাগ থাকা জরুরি। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ ধরনের চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে যেন ভবিষ্যতে এরকম ঘটনাগুলো পুনরায় ঘটতে না পারে।
বগুড়ায় চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা একটি বড় ধরনের উদ্বেগজনক ঘটনা হিসেবে দেখা দিয়েছে। চাকরিপ্রত্যাশী যুবকদের জীবনে এমন প্রতারণা গভীর প্রভাব ফেলছে। ইতিমধ্যে এই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলেও, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এ ঘটনায় বগুড়ার জনগণ এখন আরও সতর্ক, এবং সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, চাকরি পাওয়া সহজ নয়, এবং কোনো ধরনের প্রলোভন কিংবা মিথ্যা আশ্বাসে টাকা প্রদান কখনই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।