এসআই নিয়োগ ২০২৫: ফলাফল প্রকাশ, প্রাথমিকভাবে সুপারিশ পেলেন ৫৯৯ জন

বাংলাদেশ পুলিশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া ‘ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) নিয়োগ-২০২৫’-এর ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। রবিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে বাংলাদেশ পুলিশ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই ফলাফল প্রকাশ করে।
এবারের নিয়োগ পরীক্ষার লিখিত, মনস্তত্ত্ব, বুদ্ধিমত্তা ও মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে যাচাই-বাছাই শেষে মোট ৫৯৯ জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে সুপারিশ করা হয়েছে।
কারা পেলেন প্রাথমিক সুপারিশ?
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রার্থীদের নির্বাচন করা হয়েছে। সুপারিশকৃত প্রার্থীদের মধ্যে—
- মেধা তালিকা থেকে সুপারিশপ্রাপ্ত: ৫৬৬ জন
- মুক্তিযোদ্ধা কোটায়: ৩০ জন
- ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী কোটায়: ২ জন
- শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটায়: ১ জন
এটি স্পষ্ট যে, এবারও বাংলাদেশ পুলিশ ন্যায্যতা ও অন্তর্ভুক্তির নীতি মেনে বিভিন্ন কোটার প্রার্থীদের সুযোগ দিয়েছে।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিয়ে নির্দেশনা
সুপারিশপ্রাপ্ত সকল প্রার্থীকেই স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে উপস্থিত হতে হবে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দিষ্ট সময়সূচি খুব শিগগিরই বাংলাদেশ পুলিশের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (www.police.gov.bd) এবং টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে প্রার্থীদের মোবাইল নম্বরে পাঠানো এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।
স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই প্রার্থীরা চূড়ান্তভাবে এসআই (নিরস্ত্র) পদে নিয়োগ পাবেন।
নিয়োগ প্রক্রিয়ার ধাপসমূহ
বাংলাদেশ পুলিশের এসআই নিয়োগ অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও কঠোর প্রক্রিয়া। ২০২৫ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যে ধাপগুলো সম্পন্ন করা হয়েছে, তা হলো:
- শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা
প্রথম ধাপে প্রার্থীদের উচ্চতা, ওজন, বুকের মাপ ইত্যাদি শারীরিক যোগ্যতা যাচাই করা হয়। - লিখিত পরীক্ষা
লিখিত পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে মূল্যায়ন করা হয়। - মনস্তত্ত্ব ও বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা
মনস্তাত্ত্বিক দৃঢ়তা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা যাচাই করা হয় এই ধাপে। - মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা)
প্রার্থীর আত্মবিশ্বাস, উপস্থিত বুদ্ধি এবং যোগাযোগ দক্ষতা পরীক্ষা করা হয়। - স্বাস্থ্য পরীক্ষা
প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের চূড়ান্ত শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য যাচাই করা হবে।
কেন এত গুরুত্ব এসআই নিয়োগে?
বাংলাদেশ পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসআইদের ভূমিকা থানার কার্যক্রম পরিচালনা, তদন্ত কার্যক্রম তদারকি এবং জনসুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই পদের জন্য প্রয়োজনীয় গুণাবলী হলো নেতৃত্বের দক্ষতা, ন্যায়পরায়ণতা, ধৈর্য, শৃঙ্খলা ও দেশপ্রেম।
তাই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ সতর্কতা ও কঠোর মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়, যাতে যোগ্যতম প্রার্থীরাই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নিতে পারে।
বিগত বছরের তুলনায় কিছু পরিবর্তন
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০২৫ সালের এসআই নিয়োগে কিছু নতুন দিক উঠে এসেছে, যেমন—
- মনস্তাত্ত্বিক মূল্যায়নের গুরুত্ব বৃদ্ধি: শুধুমাত্র শারীরিক সক্ষমতার ওপর নির্ভর না করে এবার মানসিক দৃঢ়তা ও সংকট মোকাবেলার দক্ষতা আরও গুরুত্ব পেয়েছে।
- ডিজিটাল কমিউনিকেশন: প্রার্থীদের ফলাফল জানাতে টেলিটক ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হয়েছে, যা আগে তুলনামূলক সীমিত ছিল।
- বিভিন্ন কোটার প্রতি সংবেদনশীলতা: মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধী কোটাকে যথাযথ সম্মান দিয়ে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
পরবর্তী করণীয় কী?
সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের এখন স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই নিয়োগের জন্য পরবর্তী ধাপ শুরু হবে, যেখানে পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (পিটিসি) বা বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
সেখানেও কয়েক মাসের কঠোর শারীরিক ও মানসিক প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হবে প্রার্থীদের। প্রশিক্ষণ শেষ করে সাফল্যের সাথে পাস করলেই তারা পুলিশ বাহিনীর সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করতে পারবেন।
বাংলাদেশ পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগ পাওয়া মানে শুধু একটি চাকরি পাওয়া নয়—এটি একটি দায়িত্ব, যেখানে দেশের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মহান দায়িত্ব জড়িয়ে আছে। তাই নিয়োগপ্রাপ্ত ৫৯৯ জন প্রার্থীকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি মনে রাখতে হবে, সামনে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে কঠোর প্রশিক্ষণ এবং কঠিন দায়িত্ব।
দেশের জন্য সৎ, সাহসী ও ন্যায়নিষ্ঠ পুলিশ অফিসার হিসেবে গড়ে ওঠাই হবে এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য।