জাতীয়

নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রা উপহার দেওয়ায় কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

২০২৫ সালের ঈদুল ফিতরের সময় দেশের মানুষের নির্বিঘ্ন ও স্বস্তিদায়ক যাত্রার অভিজ্ঞতা একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। রাজধানীসহ সারাদেশে যানজট, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও পরিবহন বিশৃঙ্খলার বড় কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এই সফল ব্যবস্থাপনার স্বীকৃতি দিয়ে আজ রোববার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস

তিনি বলেন, “নয় দিনব্যাপী ঈদের এই উৎসবে কোনো বড় ধরনের যানজট কিংবা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের খবর নেই। সবার মুখে শুধুই প্রশংসা, যা আমাদের একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপন করতে সহায়তা করেছে।”

বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়

রোববার (২০ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত হয় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, সড়ক পরিবহন ও সেতু, এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের এক বিশেষ বৈঠক। বৈঠকে সম্প্রতিক ঈদ উপলক্ষে নেওয়া প্রস্তুতি ও কার্যক্রমের বিস্তারিত মূল্যায়ন হয়।

এসময় উপদেষ্টা জানান, “এবারের ঈদে আমরা যে সুন্দর ব্যবস্থাপনা করতে পেরেছি, তা কেবল এক মন্ত্রণালয়ের সাফল্য নয়। এটি সমন্বিত প্রচেষ্টার ফল, যেখানে সবাই এক ইউনিট হিসেবে কাজ করেছেন।”

যানজট ও বিশৃঙ্খলাবিহীন ঈদে জনগণের প্রশংসা

গত বছরের তুলনায় এবারের ঈদযাত্রা ছিল অনেক বেশি আরামদায়ক ও পরিকল্পিত। মহাসড়কগুলোতে ছিল না দীর্ঘ যানজট, এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল প্রায় স্বাভাবিক। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমার কাছে এখন পর্যন্ত এবারের ঈদযাত্রা নিয়ে কেবল ইতিবাচক মতামতই এসেছে। কেউ অভিযোগ করেনি, বরং সবাই বলছে—এবারের ঈদযাত্রা ছিল নজিরবিহীন।”

এই সফলতার ফলে একটি স্থায়ী মানদণ্ড গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। “বছরজুড়ে এই মান ধরে রাখতে পারলে জনগণের আস্থা আরও বাড়বে,” বলেন ড. ইউনূস।

সায়েদাবাদ টার্মিনাল ছিল পরিষ্কার ও প্রস্তুত

বৈঠকে উপদেষ্টা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু, রেলপথ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়কারী উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। তিনি জানান, ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে তারা কেবল নিজেদের মন্ত্রণালয় নয়, বরং অন্যান্য দপ্তর এবং এমনকি বেসরকারি খাতকেও সম্পৃক্ত করেছেন।

তিনি বলেন, “সবচেয়ে বড় যে সমস্যা ছিল, সেটি ছিল সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল। ঈদের আগে সেখানে গিয়ে দেখি, পুরো এলাকা ছিল ময়লায় ভরা, একেবারে অগোছালো। মনে হচ্ছিল যেন এটি একটি আবর্জনার ভাগাড়। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করি এবং দ্রুত সেটি পরিষ্কার করে মানুষের চলাচলের উপযোগী করে তুলি।”

কোনো কর্মকর্তা ছুটি নেননি, মাঠে ছিলেন সরাসরি

ফাওজুল কবির উল্লেখ করেন, ঈদের সময় অনেক সরকারি কর্মকর্তা ছুটিতে নিজ গ্রামে যান। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ছিল। “কোনো কর্মকর্তা গ্রামে যাননি। সবাই মাঠে ছিলেন, সবকিছু দেখভাল করেছেন। এটি একটি দলগত প্রচেষ্টার ফল,” বলেন তিনি।

এই প্রচেষ্টার ফলেই ঈদে দীর্ঘ যানজট, বাস-ট্রেন সময়সূচি বিপর্যয় বা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মতো সাধারণ সমস্যা দেখা যায়নি।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি

২০২৫ সালের রমজান মাস ও ঈদুল ফিতরের সময় সারাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রায় স্বাভাবিক ছিল। বিভিন্ন স্থানে স্বল্প সময়ের জন্য লোডশেডিং হলেও তা ছিল সহনীয় মাত্রার। বৈঠকে উপস্থিত বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা মমতাজ জানান, ঈদের সময় অতিরিক্ত চাহিদা সামলাতে আগে থেকেই বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আনা হয়। ফলে আবাসিকে গ্যাস ঘাটতি দেখা যায়নি।”

ঈদুল আজহার জন্যও প্রস্তুতির ঘোষণা

প্রধান উপদেষ্টার দিকনির্দেশনায় আগামী ঈদুল আজহার প্রস্তুতিও এখন থেকেই শুরু হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়। ফাওজুল কবির বলেন, “যেহেতু এবারের ঈদুল ফিতর সফলভাবে অতিক্রম করেছি, তাই ঈদুল আজহাও যেন তেমনি হয়, সে অনুযায়ী আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।”

তিনি আরও আশ্বাস দেন, “ইনশাআল্লাহ, আসন্ন ঈদুল আজহাও হবে নির্বিঘ্ন ও ঝামেলামুক্ত।”

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আরও অনেকে

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন:

  • ড. শেখ মইনউদ্দিন, বিশেষ সহকারী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়
  • সিরাজ উদ্দিন সাথী, মুখ্য সচিব, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়
  • ফারজানা মমতাজ, সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগ
  • মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সচিব, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ

২০২৫ সালের ঈদুল ফিতরের সফল পরিচালনা দেখিয়ে দিয়েছে যে, পরিকল্পিত উদ্যোগ, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় এবং দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে জনগণকে একটি স্বস্তিদায়ক অভিজ্ঞতা দেওয়া সম্ভব। এই অভিজ্ঞতা দেশের প্রশাসন ব্যবস্থার একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। শুধু ঈদ নয়, বরং প্রতিটি জাতীয় উৎসব বা ছুটিতেও একই ধরনের ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারলে দেশবাসীর জীবন আরও সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button