মানবিক পুলিশিংয়ের উদাহরণ রিয়াদ, পেলেন রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক

ঢাকার সচিবালয়ের সামনে সেই বিক্ষুব্ধ দুপুরটা অনেকেই ভুলতে পারেননি। ১৪ ফেব্রুয়ারির উত্তপ্ত মুহূর্তে যখন সামান্য ভুলে রক্তগঙ্গা বইতে পারত রাজপথে, তখন এক তরুণ পুলিশ কনস্টেবল—রিয়াদ হোসেন—চালিয়ে গেলেন ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায়।
লাঠি ছিল হাতে, কিন্তু আঘাত হয়নি কারও গায়ে
বিক্ষোভকারীরা রাস্তায়, সাধারণ মানুষের চলাচল ব্যাহত। পুলিশ চাইলেই শক্তি প্রয়োগ করতে পারত। কিন্তু রিয়াদ মানবিকতার ভাষা বেছে নিয়েছিলেন। তাঁর হাতে লাঠি ছিল, তবে তা ছিল শূন্যে অথবা বৈদ্যুতিক খুঁটিতে। যেন বার্তা দিচ্ছিলেন—আমি দায়িত্বে আছি, কিন্তু আমি আপনাদের শ্রদ্ধাও করি।
এই মানবিক দৃশ্যটি ধরা পড়ে এক ভিডিওতে, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। মানুষ বলতে থাকে—“এই রকম পুলিশই তো চাই!” সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশ্লেষক, সবাই মুগ্ধ হন কনস্টেবল রিয়াদের সংযম আর আত্মনিয়ন্ত্রণ দেখে।
রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা) পেলেন রিয়াদ
যদিও স্বীকৃতি পেতে সময় লেগেছে কিছুটা, কিন্তু সেটি এসেছে গর্ব ও মর্যাদার সঙ্গেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২৭ মার্চের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়—
“নাগরিকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে জনশৃঙ্খলা রক্ষায় অভিনব বুদ্ধিদীপ্ত পুলিশিং কৌশলের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ সদস্য রিয়াদ হোসেনকে রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা) প্রদান করা হলো।”
পদকের সঙ্গে যা পাচ্ছেন রিয়া
- এককালীন নগদ সম্মানী: ৭৫,০০০ টাকা
- মাসিক ভাতা: ১,৫০০ টাকা
- মূল প্রাপ্তি: মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া
সহিংসতা নয়, মানবতাই সেরা কৌশল
রিয়াদের এই পুরস্কার পুলিশ বাহিনীর কাছে একটি বার্তা হয়ে এসেছে—শুধু অস্ত্র বা শক্তি নয়, মানবিকতা দিয়েও আইন রক্ষা করা সম্ভব। এমন সংবেদনশীল পুলিশ সদস্যরাই বদলে দিতে পারেন জনগণের পুলিশ সম্পর্কে ধারণা।
নীরব নায়ক রিয়াদ
তিনি কারও গায়ে লাঠি চালাননি। তিনি রক্ত চাননি, চেয়েছেন শৃঙ্খলা। আর সেই মুহূর্তেই জন্ম হয়েছে একজন নীরব নায়কের। তাঁর মতো সদস্যরা প্রমাণ করেন—ক্ষমতা দিয়ে নয়, সম্মান দিয়ে জয় করা যায় মানুষের মন।