জাতীয়

জাতীয় ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুত: সময়, খরচ ও অন্যান্য তথ্য​

পবিত্র ঈদুল ফিতর মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য সবচেয়ে আনন্দময় উৎসবগুলোর একটি। এই দিনটি উদযাপনের জন্য ঢাকার জাতীয় ঈদগাহ ময়দান বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, যেখানে হাজারো মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। এবারের ঈদুল ফিতরের নামাজের জন্য ময়দানটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা হয়েছে, যা একটি বিশাল কর্মযজ্ঞের ফলাফল।​

ময়দানের ধারণক্ষমতা ও আয়োজন

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে একসঙ্গে প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে আশপাশের খালি জায়গা ও সড়কসহ মোট প্রায় ৯০ হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এই আয়োজনের দায়িত্ব পালন করে থাকে।​

প্রস্তুতির সময় ও শ্রম

এবারের ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুতির কাজ পঞ্চম রমজান থেকে শুরু হয়ে ২৩ দিন ধরে সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিদিন শতাধিক কর্মী এই বিশাল কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত ছিলেন। মেসার্স আবুল হক অ্যান্ড সন্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।​

ব্যয় ও উপকরণ

ময়দান প্রস্তুতে ডিএসসিসির প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। প্যান্ডেল তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৪৩ হাজারের বেশি বাঁশ ও ১৫ টনের বেশি রশি। বৃষ্টি থেকে সুরক্ষা দিতে টাঙানো হয়েছে প্রায় ১,৯০০ ত্রিপল, এবং আলোকসজ্জার জন্য লাগানো হয়েছে প্রায় ৯০০ টিউবলাইট।​

সুবিধা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

মুসল্লিদের আরামের জন্য ময়দানে ৯০০ সিলিং ফ্যানসহ মোট ১,১০০-এর বেশি ফ্যান স্থাপন করা হয়েছে। অজুর জন্য ১১৩ জন পুরুষ ও ২৭ জন নারীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য পৃথক ফটক ও বসার ব্যবস্থা রয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন। এছাড়া, জরুরি চিকিৎসা সহায়তার জন্য দুটি মেডিকেল টিম প্রস্তুত থাকবে।​

ঈদের প্রধান জামাতের সময়সূচি

জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে আটটায় অনুষ্ঠিত হবে। আবহাওয়া প্রতিকূল হলে, সকাল নয়টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জামাত অনুষ্ঠিত হবে। মুসল্লিদের জন্য আরামদায়ক কার্পেট বিছানো হয়েছে, তাই জায়নামাজ সঙ্গে আনার প্রয়োজন নেই।​

ইতিহাস ও গুরুত্ব

১৯৮৭-৮৮ সালে জাতীয় ঈদগাহ হিসেবে ঘোষিত এই ময়দানটি বর্তমানে হাইকোর্টের অধীনে পরিচালিত হলেও, এর দেখভালের দায়িত্ব পালন করে গণপূর্ত বিভাগ। ২০০০ সাল থেকে ঈদের নামাজের জন্য ময়দান প্রস্তুতের দায়িত্ব পালন করছে ঢাকা সিটি করপোরেশন, যা পরবর্তীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে আসে।​

সাধারণ মুসল্লিদের জন্য নির্দেশনা

মুসল্লিদের অনুরোধ করা হচ্ছে নির্ধারিত ফটক দিয়ে প্রবেশ করতে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর নির্দেশনা মেনে চলতে। ব্যক্তিগত সামগ্রী সঙ্গে আনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। ময়দানের ভেতরে পানির বোতল, ছাতা ইত্যাদি আনা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।​

পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা

ঈদের দিন জাতীয় ঈদগাহের আশপাশের সড়কগুলোতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। মুসল্লিদের সুবিধার জন্য নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জনসাধারণকে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে ট্রাফিক জ্যাম এড়ানো যায়।​

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি

ময়দানের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নামাজের আগে ও পরে নিয়মিত পরিষ্কার করা হবে। মুসল্লিদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এবং প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করতে অনুরোধ করা হয়েছে।​

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মুসল্লিদের সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে নামাজ আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এবারের ঈদুল ফিতর সবার জন্য আনন্দময় ও নিরাপদ হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button