জাতীয়

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস

১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতি এক বিভীষিকাময় রাতের সম্মুখীন হয়েছিল, যা আমাদের ইতিহাসে কালরাত্রি হিসেবে পরিচিত।

২৫ মার্চের কালরাত্রি

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পূর্ব পরিকল্পিত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে সামরিক অভিযান শুরু করে। তাদের লক্ষ্য ছিল বাঙালি জাতির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা চিরতরে দমন করা। সেই রাতে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা, রাজারবাগসহ বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়।

গণহত্যার স্বীকৃতি ও পরিসংখ্যান

পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয় যে, ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার পত্রিকা ‘হেরাল্ড ট্রিবিউন’ এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৫ মার্চ রাতে শুধু ঢাকা শহরেই ১ লাখ লোককে হত্যা করা হয়েছিল। মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ করেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’ এ বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের পাঁচটি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি

২৫ মার্চের সেই নৃশংস ঘটনার স্মরণে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে এ দিনকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও প্রচেষ্টা

বাংলাদেশ সরকার ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ‘জেনোসাইড ওয়াচ’ এবং ‘লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন’ এই গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে স্বীকৃতি প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে।

স্মরণ ও প্রতীকী কর্মসূচি

প্রতি বছর ২৫ মার্চ রাতে জাতি এক মিনিটের প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করে, যা সেই ভয়াল রাতের অন্ধকার ও বেদনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

২৫ মার্চ আমাদের ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়, যা বাঙালি জাতির স্বাধীনতার সংগ্রামের নৃশংসতম স্মৃতি বহন করে। এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় স্বাধীনতার জন্য প্রদত্ত অসংখ্য প্রাণের আত্মত্যাগ ও বীরত্বগাঁথা।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button