জাতীয়বানিজ্য

ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

রাজধানীর জুরাইন বালুর মাঠ বাজারে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ, পণ্যের মান বজায় রাখা এবং ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে সাতটি দোকানকে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে মোট ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

ভোক্তা অধিকারের অভিযান: কেন প্রয়োজন?

বর্তমানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। অনেক ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার আশায় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন, ভেজাল খাদ্য বিক্রি করেন কিংবা মানহীন পণ্য বাজারজাত করেন। এসব অনিয়ম রোধে এবং ভোক্তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিয়মিত বাজার অভিযান পরিচালনা করছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

পবিত্র রমজান মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে আজ বুধবার দুপুর ১টার দিকে সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুস সালামের নেতৃত্বে জুরাইনে এই অভিযান পরিচালিত হয়।

কোন দোকান কী কারণে জরিমানা পেল?

অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা বিভিন্ন দোকান পরিদর্শন করেন এবং অনিয়ম ধরা পড়লে জরিমানা আরোপ করেন।

  • মূল্য তালিকা না থাকায়: আনোয়ার স্টোরকে ১০,০০০ টাকা জরিমানা
  • অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি: বিসমিল্লাহ স্টোরকে ১০,০০০ টাকা জরিমানা
  • ভেজাল চিনি বিক্রি: জাকির ট্রেডার্সের মালিক জাকির হোসেনকে ৫,০০০ টাকা জরিমানা
  • নকল কসমেটিকস ও অতিরিক্ত দামে চিনি বিক্রি: জনপ্রিয় স্টোরকে ২০,০০০ টাকা জরিমানা
  • মূল্য তালিকা না থাকায়: মা-বাবার দোয়া রশিদ ভাইয়ের গোস্তের দোকানের মালিক রজ্জব মিয়াকে ৩,০০০ টাকা জরিমানা
  • বেশি দামে কাঁচা পণ্য বিক্রি: সবুজ মিয়ার কাঁচা পণ্যের দোকানকে ১,০০০ টাকা জরিমানা
  • মূল্য তালিকা না থাকায়: শরিফ কাঁচা পণ্যের দোকানকে ১,০০০ টাকা জরিমানা

ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া

বাজারে উপস্থিত ক্রেতারা এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, “এ ধরনের অভিযান প্রতিদিন হওয়া উচিত। কারণ ম্যাজিস্ট্রেট এলে দোকানিরা দাম কমায়, আর চলে গেলে আবার বাড়িয়ে দেয়।”

অন্য এক ক্রেতা ফাতেমা বেগম বলেন, “অনেক দোকানি ইচ্ছামতো দাম নেয়। ভোক্তা অধিকার অভিযান করলে আমরা একটু হলেও সঠিক দামে পণ্য পাই।”

ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তাদের বক্তব্য

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, “রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে আমাদের অভিযান চলবে। আমরা চাই, বাজারের পরিবেশ স্বচ্ছ ও নিয়মতান্ত্রিক হোক, যাতে ভোক্তারা ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারেন।”

ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানের ইতিবাচক দিক

ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান শুধু জরিমানা করার জন্য নয়, বরং বাজারকে সুশৃঙ্খল রাখার অন্যতম মাধ্যম। এই অভিযানের ফলে—

  • ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত মূল্য তালিকা অনুসরণ করতে বাধ্য হন।
  • নকল ও ভেজাল পণ্য বিক্রি কমে যায়।
  • ক্রেতারা নির্দিষ্ট দামে মানসম্মত পণ্য পান।
  • অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
  • বাজারে স্বচ্ছতা ও নিয়মশৃঙ্খলা বজায় থাকে।

এ ধরনের অভিযান নিয়মিত পরিচালিত হলে সাধারণ ভোক্তারা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি বাজার ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত হবে।

ভোক্তা অধিকারের কাছে অভিযোগ দায়ের করবেন কীভাবে?

ভোক্তাদের অধিকার রক্ষার জন্য জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যে কেউ লিখিতভাবে অভিযোগ জানাতে পারেন। ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অনুযায়ী, যে কোনো ব্যক্তি যদি মনে করেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন, তাহলে তিনি নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে অভিযোগ করতে পারেন—

কোথায় অভিযোগ করবেন?

জাতীয় ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র

  • ঠিকানা: টিসিবি ভবন-৯ম তলা, কারওয়ান বাজার, ঢাকা
  • ফোন: ০১৭৭৭ ৭৫৩৬৬৮
  • ই-মেইল: [email protected]

এছাড়াও, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ে অভিযোগ করা যাবে।

কীভাবে অভিযোগ করবেন?

  • লিখিতভাবে অভিযোগ করতে হবে।
  • ই-মেইল, ফ্যাক্স, ওয়েবসাইট অথবা সরাসরি গিয়ে অভিযোগ করা যাবে।
  • অভিযোগের সঙ্গে পণ্য বা সেবার ক্রয় রশিদ সংযুক্ত করতে হবে।
  • অভিযোগকারীর নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর ও পেশা উল্লেখ করতে হবে।

ভোক্তা অধিকারের অভিযান শুধু জরিমানা নয়, বরং বাজারকে স্বচ্ছ রাখার জন্য অপরিহার্য ব্যবস্থা। নিয়মিত তদারকি থাকলে ব্যবসায়ীরা প্রতারণার সুযোগ কম পাবে এবং সাধারণ মানুষ ন্যায্যমূল্যে মানসম্মত পণ্য কিনতে পারবেন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button