জাতীয়

বিটিআরসি সিদ্ধান্ত: আজ থেকে বন্ধ হবে ১০টির বেশি সিম

Advertisement

বাংলাদেশে মোবাইল সিম ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। দেশের টেলিযোগাযোগ খাত নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ঘোষণা করেছে যে, ১ নভেম্বর ২০২৫ থেকে কোনো ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুযায়ী ১০টির বেশি মোবাইল সিম সক্রিয় রাখা যাবে না। এই সিদ্ধান্ত মোবাইল অপারেটরদের জন্য বাধ্যতামূলক এবং তারা আজ থেকেই অতিরিক্ত সিম নিষ্ক্রিয় করার প্রক্রিয়া শুরু করবে।

বিটিআরসি সম্প্রতি এক অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ৩০ অক্টোবরের পর থেকেই অতিরিক্ত সিম স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করা হবে। এতে একজন ব্যক্তির নামের সঙ্গে জড়িত সিমের সংখ্যা ১০টির বেশি থাকবে না। এর আগে, একজন নাগরিক সর্বোচ্চ ১৫টি সিম ব্যবহার করতে পারতেন।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, “১ নভেম্বর থেকে আমরা মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে অতিরিক্ত সিম নিষ্ক্রিয় করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ডিসেম্বরের মধ্যে নিশ্চিত করা হবে যে, কোনো এনআইডির নামে ১০টির বেশি সিম সক্রিয় থাকবে না।”

অতিরিক্ত সিম নিষ্ক্রিয় করার কারণ

বাংলাদেশে মোবাইল সিমের সংখ্যা গ্রাহকের প্রকৃত সংখ্যা থেকে অনেক বেশি। বিটিআরসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে সক্রিয় মোবাইল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ৬২ লাখ। কিন্তু প্রকৃত গ্রাহক সংখ্যা মাত্র ৬ কোটি ৭৫ লাখ। অর্থাৎ, দেশে অনেক মানুষ একাধিক সিম ব্যবহার করছেন।

  • ৮০ শতাংশের বেশি গ্রাহকের কাছে ৫টির কম সিম আছে
  • প্রায় ১৬ শতাংশ গ্রাহকের ৬ থেকে ১০টি সিম আছে
  • মাত্র ৩ শতাংশ গ্রাহক ১১টির বেশি সিম ব্যবহার করছেন

বিটিআরসি সূত্র জানায়, এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য হল সিম ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং প্রতারণা রোধ করা। অতিরিক্ত সিমের কারণে মোবাইল অপারেটর এবং সাধারণ গ্রাহক উভয়ের জন্য সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

গ্রাহকরা কীভাবে তাদের সিম যাচাই করবেন

গ্রাহকরা চাইলে অনলাইনে বা মোবাইল ফোন থেকে *১৬০০২# ডায়াল করে তাদের এনআইডিতে নিবন্ধিত সিমের সংখ্যা যাচাই করতে পারবেন। এতে তারা সহজেই বুঝতে পারবেন তাদের কাছে কতটি সক্রিয় সিম রয়েছে এবং কোনগুলো অতিরিক্ত।

বিটিআরসি আরও জানিয়েছে, সিম বন্ধ করার ক্ষেত্রে ‘দৈবচয়ন’ নীতি অনুসরণ করা হবে। অর্থাৎ, কোন সিম বন্ধ হবে তা পূর্ণরূপে এলোমেলোভাবে নির্ধারণ করা হবে। এটি এমন একটি নীতি যা গ্রাহকের জন্য কিছুটা অপ্রত্যাশিত হতে পারে, কারণ এতে প্রয়োজনীয় বা গুরুত্বপূর্ণ সিমও বন্ধ হতে পারে।

মোবাইল অপারেটরদের দায়িত্ব

বিটিআরসি নির্দেশ দিয়েছে যে সমস্ত মোবাইল অপারেটর তাদের গ্রাহকের অতিরিক্ত সিম নিষ্ক্রিয় করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। গ্রাহক চাইলে, তারা সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অতিরিক্ত সিম ডি-রেজিস্ট্রার করতে পারবেন।

দেশের প্রধান মোবাইল অপারেটরগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • গ্রামীণফোন (GP)
  • রবি (Robi)
  • বাংলালিংক (Banglalink)
  • টেলিটক (Teletalk)

প্রতিটি অপারেটরকে গ্রাহকের নিরাপত্তা এবং সুবিধার কথা মাথায় রেখে সতর্কভাবে সিম বন্ধের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।

সিম ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনার গুরুত্ব

সিম ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরানো এবং একাধিক সিমের অপব্যবহার রোধ করা বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে অত্যন্ত জরুরি। বিশেষত, প্রতারণা, জালিয়াতি, এবং সিম ব্যবহারের মাধ্যমে ঘটে যাওয়া অপরাধ প্রতিরোধে এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অতিরিক্ত সিম ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, যেমন:

  • মোবাইল ক্রাইম বা প্রতারণার ঘটনা বৃদ্ধি
  • অনলাইন আর্থিক লেনদেনে জালিয়াতি
  • সরকারী বা প্রাইভেট সেবা ব্যবস্থায় অসুবিধা

এই কারণে বিটিআরসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রত্যেক নাগরিকের নামে সর্বোচ্চ ১০টি সক্রিয় সিম রাখা যাবে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

অন্যান্য দেশেও একাধিক সিম ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের একাধিক রাজ্যে নাগরিকদের নামে ৫টির বেশি সিম রাখা নিষিদ্ধ। এটি মূলত প্রতারণা রোধ এবং সরকারি সুবিধা সঠিকভাবে বিতরণের জন্য নেওয়া হয়। বাংলাদেশও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের মোবাইল ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাচ্ছে।

গ্রাহকদের জন্য পরামর্শ

বিটিআরসি জানিয়েছে, গ্রাহকরা তাদের গুরুত্বপূর্ণ সিমগুলোর তথ্য সুরক্ষিত রাখবেন। এছাড়া, নতুন সিম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করবেন। অতিরিক্ত সিম ব্যবহার না করে, শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় সিম ব্যবহার করাই সবচেয়ে নিরাপদ।

গ্রাহকরা নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:

  1. *১৬০০২# ডায়াল করে এনআইডিতে নিবন্ধিত সব সিমের তথ্য যাচাই করা
  2. অতিরিক্ত সিমের জন্য মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার সার্ভিসের সাথে যোগাযোগ করা
  3. গুরুত্বপূর্ণ বা প্রয়োজনীয় সিম সংরক্ষণের জন্য নিশ্চিত হওয়া

সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি

বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, “আমাদের লক্ষ্য দেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অতিরিক্ত সিমের ব্যবহার প্রতারণা, জালিয়াতি এবং অবৈধ কার্যক্রমে সহায়ক হতে পারে। তাই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।”

সরকারের পক্ষ থেকে জানা গেছে, সিমের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মোবাইল সেবা আরও নিরাপদ ও কার্যকর হবে। এছাড়াও, ভবিষ্যতে নতুন সেবা ও সুবিধা চালুর ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ সহায়ক হবে।

বাংলাদেশে মোবাইল সিম ব্যবস্থায় এই নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ায় গ্রাহক, অপারেটর এবং সরকারের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। ১ নভেম্বর থেকে ১০টির বেশি সিম নিষ্ক্রিয় হওয়া শুরু হবে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ কার্যকর হবে।

এতে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, প্রতারণা রোধ হবে এবং সাধারণ গ্রাহকরা তাদের সিম ব্যবস্থাপনায় আরও স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা অনুভব করবেন।

গ্রাহকরা এখনই *১৬০০২# ডায়াল করে তাদের এনআইডিতে নিবন্ধিত সিমের সংখ্যা যাচাই করতে পারবেন এবং অতিরিক্ত সিম ডি-রেজিস্ট্রার করার মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকতে পারবেন।

MAH – 13570 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button