
পুলিশের খোয়া যাওয়া ১,৩৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন দেশের পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালেই তিনি দুর্গাপূজা ও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
আইজিপি জানান, এই অস্ত্রগুলো মূলত পার্বত্য এলাকা, বনাঞ্চল ও বিভিন্ন অনিয়ন্ত্রিত ব্যক্তির কাছে চলে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সরকার এবং পুলিশ এদের উদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
নির্বাচনকে ঘিরে পুলিশ প্রস্তুতি
আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্নভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশ আরও কঠোর ও সচেতন হবে। এর অংশ হিসেবে আগামী নির্বাচনের জন্য পুলিশ বাহিনীকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, ১.৫ লাখ পুলিশ সদস্য নির্বাচনের জন্য পেশাগত দক্ষতা এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখার প্রশিক্ষণ পাবেন। আইজিপি আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, “পুলিশ নির্বাচনের দায়িত্ব পালনে সক্ষম এবং কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা বা অনিয়ম প্রতিরোধ করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।”
দুর্গাপূজা ২০২৫: সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
আইজিপি জানান, দুর্গাপূজার সময় সারাদেশে ৪৯টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ১৫টি মামলায় ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এসব ঘটনা কোনো বড় ধরনের বিপত্তি সৃষ্টি করতে পারেনি এবং পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, দুর্গাপূজার মণ্ডপ, মেলায় বা উৎসবস্থলে কেউ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশের অস্ত্র খোঁয়া যাওয়ার প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশ পুলিশ গত কয়েক বছরে বিভিন্ন কারণে কয়েকটি অস্ত্র তালিকা থেকে খোয়া গেছে। আইজিপি জানিয়েছেন, ১,৩৫০টি অস্ত্র এখনও উদ্ধার হয়নি, যার মধ্যে রয়েছে:
- স্বয়ংক্রিয় বন্দুক,
- পিস্তল,
- শটগান,
- ও অন্যান্য নিরাপত্তা ও সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ব্যবহৃত অস্ত্র।
প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, বেশিরভাগ অস্ত্র অবৈধ ব্যক্তির হাতে চলে গেছে এবং কিছু হয়তো পার্বত্য অঞ্চলে অসামাজিক সংগঠন বা আরসা (আসাম ও সন্ত্রাসী সংগঠন) এর হাতে পড়েছে।
আইজিপি বাহারুল আলম জানান, অস্ত্রগুলো উদ্ধারের জন্য নিয়মিত অভিযান ও পাহারার ব্যবস্থা চলছে। পুলিশ বিশেষ দল গঠন করে আগ্রাসী ও অবৈধ হস্তক্ষেপকারী থেকে অস্ত্রগুলো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
পুলিশ প্রশিক্ষণ ও নির্বাচনী প্রস্তুতি
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুলিশ প্রশাসন ইতিমধ্যেই একটি সর্বদলীয় প্রস্তুতি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে:
- পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি: পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নির্বাচনকালীন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি।
- নিরপেক্ষতা ও সতর্কতা: কোনো রাজনৈতিক চাপ বা প্রভাবের বাইরে থেকে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখা।
- জনসংযোগ ও সচেতনতা: সাধারণ মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানানো।
- নিরাপত্তা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা: সিসিটিভি, ড্রোন ও কমিউনিকেশন টুলসের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে নজরদারি।
আইজিপি আশ্বাস দেন, পুলিশ নির্বাচনের সময় পুরোপুরি প্রস্তুত থাকবে এবং কোনো অনিয়ম, হিংসা বা বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরি হলে তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।
দুর্গাপূজা উদযাপন: নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা
২০২৫ সালের দুর্গাপূজা উদযাপনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে পুলিশ বিশেষ নজরদারি চালিয়েছে। বিশেষ করে শহরের বড় মেলায়, পূজামণ্ডপে ও জনবহুল এলাকায় পুলিশ পুলিশ টিম, কন্ট্রোল রুম এবং মোবাইল প্যাট্রোল নিয়োজিত করেছে।
আইজিপি জানিয়েছেন, দুর্গাপূজার সময় কোনো বড় ধরনের অশান্তি বা সংঘর্ষ ঘটেনি। তবে ৪৯টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে:
- জনরোষের কারণে ছোটখাট ধাক্কাধাক্কি,
- ভাঙচুরের চেষ্টা,
- সাধারণ বিবাদ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে এবং দুর্গাপূজার উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
আইজিপির সতর্কবার্তা
আইজিপি বাহারুল আলম আরও জানান, যেকোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি পূজামণ্ডপ বা জনসমাগমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, “পুলিশ জনগণের নিরাপত্তা ও শান্তি নিশ্চিত করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত। আমরা চাই, জনগণ উৎসব এবং নির্বাচন উভয়কেই নিরাপদে উপভোগ করতে পারুক।”
সারসংক্ষেপ: বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও পুলিশি পদক্ষেপ
বর্তমান সময়ে পুলিশ প্রধানত দুইটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে:
- ১,৩৫০টি খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান।
- নির্বাচন ও উৎসবকালে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা।
উপরন্তু, পুলিশ পদক্ষেপ নিচ্ছে:
- বিশেষ অভিযান ও রেড-রেইড: অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে।
- পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ: পেশাগত দক্ষতা ও নির্বাচনী নীতি সম্পর্কে।
- জনসংযোগ: সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা নির্দেশনা প্রদান।
- প্রযুক্তি ব্যবহার: সিসিটিভি, ড্রোন, কমিউনিকেশন টুলস।
আইজিপির আশ্বাস অনুযায়ী, বাংলাদেশ পুলিশ দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বদা সজাগ এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
আইজিপি বাহারুল আলমের এই ব্রিফিং প্রমাণ করে, বাংলাদেশ পুলিশ দূর্গাপূজা ও আসন্ন নির্বাচনের সময় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পূর্ণ প্রস্তুত। খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারের কাজ চলমান থাকলেও, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সরকার এবং পুলিশ দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এছাড়া, নির্বাচনের জন্য প্রশিক্ষিত পুলিশ বাহিনী, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং জনসংযোগ কার্যক্রম নিশ্চিত করছে যে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
MAH – 13090 I Signalbd.com