
বাংলাদেশের আকাশে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেখা গেছে পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। এর মাধ্যমে ১৪৪৭ হিজরি সনের রবিউস সানি মাসের সূচনা হচ্ছে আগামীকাল বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর)।
চাঁদ দেখার সরকারি ঘোষণা
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দেশের সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যালয়, আবহাওয়া অধিদপ্তর ও মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করা হয়। সব তথ্য বিশ্লেষণের পর আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় যে দেশের বিভিন্ন স্থানে রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা গেছে।
এর ফলে আগামীকাল বুধবার থেকে শুরু হবে রবিউস সানি মাসের গণনা। সেই অনুযায়ী, আগামী ১১ রবিউস সানি অর্থাৎ ৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম।
রবিউস সানি মাসের ধর্মীয় গুরুত্ব
ইসলামি ক্যালেন্ডারের চতুর্থ মাস রবিউস সানি। এর রয়েছে বিশেষ ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব। বিশেষ করে ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম মুসলিম সমাজে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি দিন, যা হযরত আব্দুল কাদের জিলানীর (রহ.) ইন্তেকালের স্মৃতিতে পালিত হয়।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলমানরা এ দিনে মিলাদ, দোয়া মাহফিল, কোরআন খতমসহ নানা ধর্মীয় কর্মসূচি পালন করে থাকেন। মাসের শুরুতেই ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়।
জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির ভূমিকা
বাংলাদেশে ইসলামি তারিখ নির্ধারণে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি হিজরি মাসের সূচনার আগে দেশব্যাপী চাঁদ দেখা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
কমিটির সদস্যরা আবহাওয়া অধিদপ্তর, মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে তথ্য নিয়ে যাচাই-বাছাই করেন। সবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে মাস শুরুর ঘোষণা দেন। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে পুরো দেশে একযোগে মাস শুরুর তারিখ নির্ধারণ সম্ভব হয়।
ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালনের প্রস্তুতি
চাঁদ দেখার ঘোষণা আসার পর থেকে দেশের বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও খানকাহে ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মানুষজন নিজেদের এলাকায় মাহফিল আয়োজনের উদ্যোগ নিচ্ছেন।
বিশেষ করে পুরান ঢাকার বিভিন্ন খানকাহ ও আঞ্চলিক মসজিদগুলোতে এ উপলক্ষে বড় আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ধর্মীয় নেতারা মানুষকে দোয়া ও ইবাদতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও একই সময়ে এ উপলক্ষে বিশেষ কর্মসূচি পালিত হয়।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
চাঁদ দেখার ঘোষণার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহ দেখা গেছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভেচ্ছা বার্তা বিনিময় করছেন। ধর্মপ্রাণ মানুষরা বিশেষ ইবাদতের পরিকল্পনা করছেন।
ঢাকার গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ শফিক বলেন, “প্রতি বছর আমরা ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম উপলক্ষে বাড়িতে দোয়ার আয়োজন করি। চাঁদ দেখার ঘোষণা আসার পর থেকে প্রস্তুতি শুরু করেছি।”
অন্যদিকে চট্টগ্রামের এক মাদরাসা শিক্ষক জানান, “আমরা মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশেষ কোরআন খতম ও মিলাদের আয়োজন করব।”
ইসলামি গবেষকদের মতামত
ধর্ম বিষয়ক গবেষকরা বলছেন, রবিউস সানি মাস মুসলিম সমাজে আত্মিক উন্নতির মাস। এ মাসে মানুষ ইবাদত, দোয়া, দরূদ শরিফ পাঠে মনোনিবেশ করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষক জানান, “ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম শুধু একটি স্মৃতিচারণ নয়, বরং এটি মুসলিম সমাজকে আধ্যাত্মিকভাবে উজ্জীবিত করার মাধ্যম। সমাজে শান্তি ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করার জন্য এর গুরুত্ব অপরিসীম।”
বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে শুরু হলো আনন্দ ও ইবাদতের প্রস্তুতি। ইসলামি ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে এ মাসে পালিত হবে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যার কেন্দ্রবিন্দু থাকবে ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের অনুষ্ঠান সমাজকে আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করার পাশাপাশি পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করে।
এম আর এম – ১৪৮১,Signalbd.com