
দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ৪০৯ জন রোগী সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নতুন করে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা
প্রতিবেদন অনুযায়ী, শনিবার সকাল ৮টা থেকে রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এই ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের মৃত্যু ঘটে এবং ৪০৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৬ জন এবং বাকিরা দেশের অন্যান্য জেলায় ভর্তি হয়েছেন।
বিভাগভিত্তিক আক্রান্তের চিত্র
গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগভিত্তিক নতুন ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৭৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭২ জন, ঢাকা বিভাগের (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬৭ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৫৪ জন, খুলনা বিভাগে ২৮ জন, ময়মনসিংহে ১১ জন, রাজশাহীতে ৫১ জন, রংপুরে ১৬ জন এবং সিলেটে ৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এ বছরের মোট আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৯ হাজার ৫২৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৮ হাজার ২২৩ জন। সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছর ডেঙ্গুতে মোট ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সারা দেশে এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল এবং ৫৭৫ জন মারা গিয়েছিলেন। ২০২৩ সালে এই সংখ্যাটি ছিল আরও বেশি; তখন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৭০৫ জন এবং আক্রান্তের সংখ্যা ছিল তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় করণীয়
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষাকালে মশার প্রজনন বেড়ে যাওয়ায় ডেঙ্গুর ঝুঁকি অনেক গুণ বেড়ে যায়। তাই মশার বংশবিস্তার রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পানি জমে থাকা স্থানগুলোতে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, বাড়ির আশপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, এবং মশারি বা রিপেলেন্ট ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্কবার্তা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, ডেঙ্গুর প্রকোপ এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তাই সামান্য জ্বর, শরীর ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা বা র্যাশ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গুর গুরুতর জটিলতা এড়াতে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
পূর্ববর্তী দুই বছরের তুলনায় এ বছর রোগীর সংখ্যা কম হলেও মৃত্যুর হার এখনও উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে অপ্রতুল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণ ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
ভবিষ্যতের ঝুঁকি ও করণীয়
আগামী কয়েক সপ্তাহে বৃষ্টিপাতের কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সাধারণ মানুষকেও নিজের বাসস্থান ও আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার মাধ্যমে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখতে হবে।
শেষ কথা
ডেঙ্গু একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ হলেও সচেতনতার অভাবে প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সম্মিলিত উদ্যোগ ও জনসচেতনতা ছাড়া এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। এখনই যদি পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে।
এম আর এম – ০৫৪৭, Signalbd.com
ডেঙ্গু, ডেঙ্গুতে মৃত্যু, ডেঙ্গু আক্রান্ত, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মশাবাহিত রোগ, ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ, ডেঙ্গু খবর, হাসপাতাল, ডেঙ্গু প্রতিরোধ, ডেঙ্গু পরিসংখ্যান, ডেঙ্গুর প্রকোপ, ডেঙ্গু সতর্কতা
এম আর এম – ০৫৪৮, Signalbd.com