
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “পতিত শক্তি গণ্ডগোল লাগিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ ভণ্ডুল করার চেষ্টা করছে। এই অপচেষ্টাকে প্রতিহত করতে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।” শনিবার বিকেলে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ১৪টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “যদি আমরা সবাই মিলে সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে না পারি, তাহলে এই সুযোগ আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে।”
বৈঠকের মূল আলোচনা
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী নেতাদের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পরাজিত শক্তি যখনই সুযোগ পাচ্ছে তখনই নানা রকম গণ্ডগোল সৃষ্টি করছে। এর মাধ্যমে তারা দেশের স্বাভাবিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে চাইছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি যত এগিয়ে যাচ্ছে, ষড়যন্ত্রও তত বাড়ছে।”
তিনি আরও বলেন, “কোনো ষড়যন্ত্র করেই গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে থামানো যাবে না। কারণ ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো গণতন্ত্রের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ।”
সভায় উপস্থিত নেতারা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু করতে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
বৈঠকে কারা ছিলেন
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণফ্রন্টের আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস, ১২ দলীয় জোটের মোস্তফা জামাল হায়দার, নেজামে ইসলাম পার্টির মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ জাসদের ড. মুশতাক হোসেন, ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের ববি হাজ্জাজ, ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ লেবার পার্টির ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্কসবাদী) মাসুদ রানা এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী।
বৈঠকের শুরুতে সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
কেন ঐক্যের ডাক গুরুত্বপূর্ণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনের আগে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোকে একত্রিত করার এই উদ্যোগ রাজনৈতিক অস্থিরতা রোধে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও অস্থিরতার কারণে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন। তাই প্রধান উপদেষ্টার এই বার্তা জনমনে আস্থা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ও চ্যালেঞ্জ
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন বেশ সরব। নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক করতে সরকারি উদ্যোগ চললেও কিছু শক্তি বারবার অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাইছে। এসব কারণে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে অনেকেই সময়োপযোগী বলছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যারা জনগণের রায়কে ভয় পায়, তারাই বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছে। আমরা চাই সবার অংশগ্রহণে স্বচ্ছ ও সুন্দর নির্বাচন।”
সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়
সভায় অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বলেন, “এই নির্বাচনে দেশের স্বার্থেই সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। ভোটের মাধ্যমে জনগণ যেন তাদের মত প্রকাশ করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
প্রধান উপদেষ্টা সভা শেষে সাংবাদিকদের জানান, এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল সব পক্ষের মধ্যে আস্থা তৈরি করা এবং নির্বাচনের পরিবেশকে শান্তিপূর্ণ রাখা।
সারসংক্ষেপ
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে। তবে এই ঐক্য ও সহযোগিতা কতটা দৃঢ়ভাবে কার্যকর হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এম আর এম – ০৫২৪, Signalbd.com