জাতীয়

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে দুই শিশুসহ ৪ জনের মৃত্যু

Advertisement

 দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ আবারও বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেছে দুই শিশুসহ ৪ জনের। এ সময়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩১৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৬৯ জনের।

ঘটনাটি কী ঘটেছে?

দেশজুড়ে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দুই শিশুসহ মোট চারজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩১৯ জন রোগী।

মৃতদের মধ্যে একজন তিন বছর বয়সী ছেলে শিশু, একজন নয় বছর বয়সী কন্যাশিশু, একজন ৫২ বছর বয়সী পুরুষ এবং একজন ৪০ বছর বয়সী নারী রয়েছেন।

এই তথ্য জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো নিয়মিত প্রতিবেদনে।

কোথায় কেমন অবস্থা?

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন বিভাগে ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তির হার ছিল এমন:

  • ঢাকা মহানগরে: ৯০ জন
  • ঢাকা বিভাগে (ঢাকা মহানগর ছাড়া): ৫৯ জন
  • বরিশাল বিভাগ: ৮৯ জন
  • চট্টগ্রাম বিভাগ: ৩৮ জন
  • রাজশাহী বিভাগ: ৩০ জন
  • ময়মনসিংহ বিভাগ: ৯ জন
  • রংপুর বিভাগ: ৪ জন

এছাড়া, নিহত চারজনের মধ্যে তিনজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার এবং একজন চট্টগ্রাম বিভাগের বাসিন্দা।

রোগীর প্রোফাইল ও বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণ

হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৩১৯ জন রোগীর মধ্যে ১৮৮ জন পুরুষ এবং ১৩১ জন নারী। এছাড়া, শিশু ও তরুণদের মধ্যেও আক্রান্তের হার চোখে পড়ার মতো।

তথ্য বলছে, ভর্তিকৃতদের মধ্যে ১০২ জনের বয়স ০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। যা প্রমাণ করে, শিশু ও কিশোররাও এখন ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

চলতি বছরের পরিসংখ্যান

চলতি বছরের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ১৮,৩৪৫ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

একই সময়ে দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে মোট ৬৯ জনের। মৃতদের মধ্যে ৩৭ জন পুরুষ এবং ৩২ জন নারী।

এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, এবারও ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে।

কী বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা?

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃষ্টির মৌসুমে এডিস মশার বিস্তার সবচেয়ে বেশি হয়। এই সময়ে পানি জমে থাকা এলাকাগুলোতে মশা জন্ম নেয় বেশি, যার কারণে সংক্রমণের হারও বেড়ে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে নাগরিকদের ব্যক্তিগত সচেতনতার পাশাপাশি স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফারহানা আক্তার বলেন,
“বাড়ির চারপাশে জমে থাকা পানি পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি ফুলদানি, ডাবের খোসা, টায়ার—এসব স্থান থেকে পানি সরাতে হবে। শুধু সরকার নয়, জনসাধারণকেও এগিয়ে আসতে হবে।”

নাগরিকদের জন্য সতর্কবার্তা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশন থেকে বারবার বলা হচ্ছে, ডেঙ্গু মোকাবিলায় জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।

নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি সবাইকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে:

  • বাসা ও অফিসের আশপাশে পানি জমতে না দেওয়া
  • ফুলদানি বা পাত্রের পানি নিয়মিত পরিবর্তন করা
  • মশারী ব্যবহার করা, বিশেষ করে শিশুদের জন্য
  • দিনের বেলায় মশা থেকে বাঁচতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ
  • ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা ও উদ্বেগ

বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান প্রবণতা বলছে আগামী দিনগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে, যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়।

নগর উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় নজর না দিলে প্রতিবছরই ডেঙ্গু প্রাণঘাতী আকারে ফিরে আসবে।

“সঠিক সমন্বয় এবং সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব নয়”—এ কথা এখন আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

শেষ কথা:

২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারানো দুই শিশু এবং বাকি দু’জনের মৃত্যু শুধু সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয় — এটি আমাদের শহর ব্যবস্থাপনা ও জনসচেতনতার এক করুণ চিত্র। সময় এসেছে দায়িত্বশীলভাবে প্রতিরোধে অংশগ্রহণের। প্রশ্ন থেকে যায়—এই মৃত্যুগুলো কি প্রতিরোধযোগ্য ছিল না?

এম আর এম – ০৪৭৭  , Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button