জাতীয়

বোন শারমিন আহমদকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করলেন সোহেল তাজ

Advertisement

 বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সন্তানরা বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সেখানে তাঁরা পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে আমন্ত্রণপত্র প্রদান করেন। এ সময় আলোচনা হয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও পারিবারিক ইতিহাস নিয়েও।

সাক্ষাতের মূল উদ্দেশ্য ও আমন্ত্রণ

সাক্ষাতের মূল উদ্দেশ্য ছিল তাজউদ্দীন আহমদের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনের আমন্ত্রণপত্র প্রদান। তাজউদ্দীন পরিবার চায়, দেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এই নেতার জন্ম শতবর্ষটি জাতীয়ভাবে উদযাপিত হোক। সে প্রেক্ষিতেই তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ইউনূসকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানান।

এ সময় শারমিন আহমদ তার লেখা বই “তাজউদ্দীন আহমদ : নেতা ও পিতা” উপহার দেন প্রধান উপদেষ্টাকে। এটি তার অন্যতম আলোচিত গ্রন্থ, যেখানে তিনি পিতার রাজনৈতিক জীবন, নীতিবোধ ও পারিবারিক মূল্যবোধ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেছেন।

সাক্ষাতের পেছনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

এই সাক্ষাৎ এমন এক সময়ে হলো, যখন বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ঘোষিত, দলটির নেতারা আত্মগোপনে বা বিদেশে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে জল্পনা চলছে, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কী হবে।

এই পটভূমিতে তাজউদ্দীন আহমদের সন্তানদের এমন সাক্ষাৎ বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। কারণ, তাদের পিতাই ছিলেন আওয়ামী লীগের সবচেয়ে আদর্শবাদী নেতা, যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেন।

শারমিন আহমদ ও সোহেল তাজের অবস্থান

শারমিন আহমদ দীর্ঘদিন ধরেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, তাজউদ্দীন আহমদের অবদান ও সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে লেখালেখি করে আসছেন। তাঁর বইগুলোতে বারবারই তিনি আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্বের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন। কয়েক মাস আগেও এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।”

অন্যদিকে, সোহেল তাজ শেখ হাসিনার সরকারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও পূর্ণমেয়াদে থাকতে পারেননি। তিনি পদত্যাগ করেন এবং এরপর থেকে দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ে। সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন সময় তিনি স্পষ্টভাবে দেশের রাজনৈতিক বৈষম্য এবং সুশাসনের অভাব নিয়ে মন্তব্য করে আসছেন।

সমসাময়িক প্রসঙ্গ: গোপালগঞ্জ হামলার প্রতিক্রিয়া

সাক্ষাতের দিনেই সোহেল তাজ তাঁর ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে গোপালগঞ্জের সাম্প্রতিক সহিংসতা নিয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন,
“গতকাল গোপালগঞ্জে যে হামলা হয়েছে, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের নেতাদের হত্যার চেষ্টা।”
তিনি অভিযোগ করেন, এই হামলার পেছনে উচ্চ পর্যায়ের পরিকল্পনা ছিল এবং একাধিক নেতার জীবন হুমকির মুখে পড়ে।

বিশ্লেষকরা কী বলছেন?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ইতিহাসবিদ ড. মাহবুব সানী বলেন,
“তাজউদ্দীন পরিবার সবসময়ই দেশের রাজনীতিতে নৈতিকতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তাই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ নিছক আমন্ত্রণ নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা বহন করে।”

তাঁর মতে, এই পরিবার রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করলে তা দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক দিক হতে পারে।

ভবিষ্যৎ কী?

সাক্ষাতের পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে — তাজউদ্দীন পরিবারের এই পদক্ষেপ কি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক উদ্দীপনার অংশ? নাকি নিছকই একটি পারিবারিক ঐতিহ্য রক্ষার প্রয়াস?

বিশ্লেষকদের মতে, এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তবে এই সাক্ষাৎ যে একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে, তাতে সন্দেহ নেই।

সারসংক্ষেপ

রাজনীতির এক সংবেদনশীল মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সন্তানরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। উপস্থিত ছিলেন তাজউদ্দীনের কন্যা শারমিন আহমদ ও পুত্র তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ।

তাজউদ্দীন আহমদের সন্তানরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে তাদের পিতার জন্ম শতবর্ষের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তবে এই সাক্ষাৎ শুধু সৌজন্য নয় — দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে।

তবে রাজনৈতিক মাঠে এই সাক্ষাতের প্রভাব কতটা গভীর হবে, তা সময়ই বলে দেবে।

এম আর এম – ০৩৮৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button