
দেশজুড়ে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু ও নতুন করে ৪২০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বরিশাল, চট্টগ্রাম, ও ঢাকাতেই আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়েছে, মৃতের সংখ্যা ৫৬।
আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই, মৃত্যু আরও একজনের
সারা দেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (১২ জুলাই সকাল ৮টা থেকে ১৩ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪২০ জন রোগী।
এই তথ্য নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি। মৃত ব্যক্তি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ছিলেন।
অঞ্চলভিত্তিক রোগী ভর্তি: বরিশাল-চট্টগ্রামে উদ্বেগজনক বৃদ্ধি
নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী বরিশাল বিভাগে—১১৬ জন। এছাড়া অন্যান্য বিভাগভিত্তিক ভর্তি সংখ্যা:
- চট্টগ্রাম বিভাগ: ৭৯ জন
- ঢাকা বিভাগ (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে): ৬০ জন
- ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন: ২৫ জন
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন: ৫৭ জন
- খুলনা বিভাগ: ২৬ জন
- রাজশাহী বিভাগ: ৪৫ জন
- ময়মনসিংহ বিভাগ: ৯ জন
- রংপুর বিভাগ: ৩ জন
এই পরিসংখ্যান স্পষ্ট করে দেয়, বরিশাল ও চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর বিস্তার তুলনামূলক বেশি, যা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে।
চলতি বছরের পরিসংখ্যান: আক্রান্ত ১৪,৮৮০, মৃত্যু ৫৬
২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৪,৮৮০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩,৫৮৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ পুরুষ ও ৪১ শতাংশ নারী।
শুধুমাত্র গত ২৪ ঘণ্টাতেই ৪৮১ জন রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। যা কিছুটা স্বস্তি দিলেও সংক্রমণের বর্তমান ধারা জনমনে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে।
গত বছরের চিত্র: ভয়াবহতার পূর্ণ চিত্র
পূর্ববর্তী বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৪ সালে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন। মৃত্যু হয়েছিল ৫৭৫ জনের।
আরও ভয়াবহ ছিল ২০২৩ সাল। সে বছর আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং প্রাণ হারান ১ হাজার ৭০৫ জন।
তুলনামূলকভাবে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বর্ষা মৌসুমের শুরুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে বরিশাল ও ঢাকার বাইরে অঞ্চলগুলোতে এই প্রবণতা বেশি।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্থানীয় সরকার ও সিটি কর্পোরেশনগুলোর মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকাই সংক্রমণ বাড়ার অন্যতম কারণ। আবহাওয়া পরিবর্তন, জলাবদ্ধতা ও সচেতনতার অভাবও ডেঙ্গুর বিস্তারে ভূমিকা রাখছে।
একজন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ বলেন,
“মশা নিধনে একক কোনো প্রচেষ্টা নয়, দরকার সম্মিলিত উদ্যোগ। বাড়ি, আশপাশ ও খোলা জায়গায় পানি জমে থাকলে তা থেকেই মশার প্রজনন হয়। জনসচেতনতা বাড়ানো ছাড়া এই সংকট সামাল দেওয়া কঠিন হবে।”
করণীয়: সতর্কতা ও প্রতিরোধ
বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকেরা কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, যা মেনে চললে ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব:
- জমে থাকা পানিতে মশা বংশবিস্তার করে—তাই বাসাবাড়ির ছাদ, ফুলের টব, পাত্র বা টায়ারে পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না
- দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার
- ফুলহাতা জামা ও ফুলপ্যান্ট পরা
- শরীরে মশা তাড়ানোর ক্রিম ব্যবহার
- ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করা
সময় এখনই ব্যবস্থা নেওয়ার
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে, যা বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়।
সরকারি ও স্থানীয় প্রশাসনকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে, পাশাপাশি জনসাধারণকেও সচেতন হতে হবে। নইলে এই রোগ একটি বড় আকারের মহামারিতে রূপ নিতে পারে।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এত বছরের অভিজ্ঞতার পরও, কেন এখনো আমরা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারছি না?
এম আর এম – ০৩১৬, Signalbd.com