
দেশজুড়ে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২ জনের, আর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৩৭ জন। বরিশাল বিভাগে সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা। স্বাস্থ্য বিভাগের সতর্কতা জারি।
ডেঙ্গুতে একদিনে দুই প্রাণহানি, নতুন করে আক্রান্ত শতাধিক
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু দাঁড়ালো ৫৪ জনে। এ সময় নতুন করে আরও ৩৩৭ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এসব তথ্য পাওয়া গেছে। মারা যাওয়া দুইজনের মধ্যে একজন রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দা এবং অপরজন চট্টগ্রাম বিভাগে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
বিভাগভিত্তিক আক্রান্তের হালচিত্র
নতুন ৩৩৭ জন রোগীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন বরিশাল বিভাগে — সেখানে একদিনেই ১০১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
অন্যান্য বিভাগগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা নিম্নরূপ:
- চট্টগ্রাম বিভাগ: ৫৮ জন
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন: ৫০ জন
- ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন: ২৬ জন
- ঢাকা বিভাগ (বাকি এলাকা): ৪১ জন
- খুলনা বিভাগ: ২৮ জন
- রাজশাহী বিভাগ: ২৭ জন
- ময়মনসিংহ বিভাগ: ৫ জন
- সিলেট বিভাগ: ১ জন
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন মোট ১,২৮৬ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছেন ৩৬১ জন এবং ঢাকার বাইরে রয়েছেন ৯২৫ জন রোগী।
মাসভিত্তিক মৃত্যু ও আক্রান্তের চিত্র
২০২৫ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে জুন মাসে — ১৯ জন। জুলাইয়ের প্রথম দশ দিনে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের।
মাসভিত্তিক হাসপাতালভর্তি রোগীর সংখ্যাও উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে:
- জানুয়ারি: ১,১৬১ জন
- ফেব্রুয়ারি: ৩৭৪ জন
- মার্চ: ৩৩৬ জন
- এপ্রিল: ৭০১ জন
- মে: ১,৭৭৩ জন
- জুন: ৫,৯৫১ জন
- জুলাই (১০ জুলাই পর্যন্ত): ৩,৬৩৫ জন
সর্বমোট ১৩,৯৩১ জন রোগী ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে কী অবস্থায় ডেঙ্গু?
২০২৪ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১১ জন। মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যদি সচেতনতা ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার না করা হয়, তবে ২০২৫ সালও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার?
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওয়ার্ডভিত্তিক মশা নিধন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে এবং পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
“বর্ষাকালে এডিস মশার প্রজনন বেশি হয়। তাই যেকোনো ধরনের জমে থাকা পানি ২৪ ঘণ্টার বেশি রাখা যাবে না”—জানান একজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।
নাগরিকদের জন্য করণীয়
- বাসা ও আশপাশে জমে থাকা পানি অপসারণ করুন
- ফুলদানি, প্লাস্টিক কন্টেইনার, ডাবের খোসা—এসব নিয়মিত পরিষ্কার করুন
- দিনে ও রাতে মশারির ব্যবহার নিশ্চিত করুন
- জ্বর হলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যান
শেষ কথা
ডেঙ্গু এখন শুধু একটি মৌসুমি রোগ নয়, এটি এক ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রূপ নিয়েছে। বর্ষাকাল যত বাড়বে, ততই বাড়বে ডেঙ্গুর প্রকোপ। এই সময়ে ব্যক্তি সচেতনতা ও প্রশাসনিক তৎপরতা—দুই-ই জরুরি।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়—আসন্ন সপ্তাহগুলোতে আমরা কি ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবো?
এম আর এম – ০২৭৪, Signalbd.com