
বাংলাদেশে একদিনের সংক্ষিপ্ত সফরে এসে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থার প্রধান অধ্যাপক হালুক গরগুন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতকে আধুনিকায়ন, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং কৌশলগত বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সরকারের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি, তবে এই বৈঠককে ঘিরে কূটনৈতিক মহলে আগ্রহ ও কৌতূহল বৃদ্ধি পেয়েছে।
তুরস্কের প্রতিনিধি দলের আগমন ও ব্যস্ততা
তুরস্কের ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি এজেন্সির (এসএসবি) প্রধান অধ্যাপক হালুক গরগুনের সঙ্গে সফররত প্রতিনিধি দলে ছিলেন দেশটির প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা। ঢাকা সফরের অংশ হিসেবে তিনি সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
এসব সাক্ষাৎ-বৈঠকে দুই দেশের সামরিক প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিনিময় এবং প্রযুক্তি সহায়তার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পূর্বপটভূমি
বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার সম্পর্ক এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে গত সাত বছরে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী তুরস্ক থেকে বারাকতার টিবি-২ ড্রোনসহ প্রায় ১৫ ধরনের আধুনিক সমরাস্ত্র সংগ্রহ করেছে।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী ওমের বোলাত ঢাকা সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা শিল্প স্থাপন এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের আহ্বান জানান। সেই ধারাবাহিকতায় হালুক গরগুনের এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সম্ভাব্য বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের ইঙ্গিত
বিশ্লেষকদের মতে, তুরস্কের প্রতিরক্ষা সংস্থার সরাসরি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের অধীনে পরিচালিত হওয়া এই সংস্থা (এসএসবি) কেবল অস্ত্র ক্রয়-বিক্রয়ই নয়, বরং প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নয়ন, স্থানীয় উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি এবং গবেষণায়ও সহায়তা দিতে পারে।
তুরস্ক চাইছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিরক্ষা বাজারে আরও সক্রিয় হতে। বাংলাদেশকে তারা একটি সম্ভাবনাময় কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করছে। আর এই প্রেক্ষাপটে ইউনূস-গরগুন বৈঠককে ভবিষ্যৎ প্রতিরক্ষা শিল্প বিনিয়োগের প্রস্তুতি ধরা হচ্ছে।
কূটনৈতিক ও কৌশলগত দৃষ্টিকোণ
তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক আগে থেকেই সুদৃঢ়। প্রতিরক্ষা খাতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হলে দক্ষিণ এশিয়ায় তুরস্কের প্রভাব বাড়বে বলে ধারণা করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
এদিকে, তুরস্কের সহযোগিতায় বাংলাদেশে আধুনিক যুদ্ধসরঞ্জাম তৈরি এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে দেশের প্রতিরক্ষা স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
“তুরস্কের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আমাদের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি কৌশলগত অবস্থানকেও জোরালো করবে”— প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক কর্নেল (অব.) মাহবুব রশীদ।
ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি
অধ্যাপক হালুক গরগুনের সফর ইতিমধ্যেই দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বৈঠকে আনুষ্ঠানিক চুক্তি না হলেও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ও সম্ভাবনার বীজ রোপিত হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এখন নজর থাকবে—এই আলোচনা কতটা দ্রুত বাস্তব রূপ নেয় এবং বাংলাদেশ কিভাবে এই সহযোগিতাকে কাজে লাগায়।
সারসংক্ষেপ
তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থা প্রধানের ঢাকা সফর এবং ইউনূসের সঙ্গে তার বৈঠক শুধুমাত্র কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এটি ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা শিল্পে বাংলাদেশ-তুরস্ক অংশীদারিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিশ্লেষকদের মতে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দশকে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।
এম আর এম – ০২৪১, Signalbd.com