
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এবার তাদের বিক্রির তালিকায় যুক্ত করছে আরও চারটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য—চা, লবণ, সাবান ও ডিটারজেন্ট। নভেম্বর থেকে এই নতুন পণ্যগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই সিদ্ধান্ত দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে এবং বাজারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
নতুন পণ্য তালিকায় যুক্ত হলো কী কী
টিসিবি এতদিন প্রধানত চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ ও চিনি সরবরাহ করে আসছিল। এবার নতুনভাবে যে চারটি পণ্য যুক্ত হচ্ছে, সেগুলো হলো:
- চা
- লবণ
- সাবান (দুই ধরণের)
- ডিটারজেন্ট
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছেন, টিসিবির বিদ্যমান কার্যক্রমের সঙ্গে এই পণ্যগুলো সংযুক্ত হলে ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো সহজ হবে।
সরকারের ভর্তুকি ও ব্যয়ভার
টিসিবির কার্যক্রম পরিচালনায় সরকার প্রতিবছর প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকে। এই অর্থের মাধ্যমেই সাশ্রয়ী দামে সাধারণ মানুষের কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, এর ফলে বাজারে সরবরাহ স্থিতিশীল থাকে এবং মজুতদারি বা কৃত্রিম সংকট তৈরি করার সুযোগ কমে যায়।
উপকারভোগী নির্বাচন ও স্মার্ট কার্ড ব্যবস্থা
বর্তমানে টিসিবির স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড ব্যবস্থার আওতায় প্রায় এক কোটি মানুষকে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৬০ লাখেরও বেশি কার্ড ইতিমধ্যেই সক্রিয় রয়েছে। তবে এখনও কয়েক লাখ কার্ড সক্রিয়করণের অপেক্ষায় আছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় প্রশাসনকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে প্রকৃত দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই সুবিধার বাইরে না থাকে।
কেন যুক্ত হচ্ছে চা, লবণ, সাবান ও ডিটারজেন্ট
চা বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পানীয়, যা প্রায় প্রতিটি পরিবারের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। অন্যদিকে লবণ, সাবান ও ডিটারজেন্টও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। বাজারে এসব পণ্যের দাম বাড়তে থাকায় নিম্নআয়ের মানুষের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছিল। সরকারের ধারণা, টিসিবির মাধ্যমে এগুলো সরবরাহ করা হলে দরিদ্র পরিবারগুলো কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে টিসিবির ভূমিকা
বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিই সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, টিসিবি সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য সরবরাহ করলে বাজারে স্বাভাবিকতা ফিরে আসে এবং ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণের প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম আরও শক্তিশালী হয়।
কর্মকর্তাদের মন্তব্য
সভায় উপস্থিত বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, উপকারভোগী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে এবং দ্রুত সমাধান করা হবে।
টিসিবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ফয়শল আজাদ জানান, নতুন পণ্য সংযোজনের ফলে টিসিবির কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে এবং সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়বে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভবিষ্যতে আরও কিছু প্রয়োজনীয় পণ্য টিসিবির তালিকায় যুক্ত করা হতে পারে। পাশাপাশি, উপকারভোগীদের সঠিকভাবে শনাক্তকরণ ও কার্ড সক্রিয়করণের কাজকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। সরকারের লক্ষ্য হলো, কেউ যেন সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর বাইরে না থাকে।
চা, লবণ, সাবান ও ডিটারজেন্ট যুক্ত হওয়ায় টিসিবির কার্যক্রম আরও সমৃদ্ধ হলো। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে সাধারণ মানুষ বিশেষত দরিদ্র শ্রেণি কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে। এখন সবার দৃষ্টি নভেম্বর মাসে, যখন নতুন এই চারটি পণ্য প্রথমবারের মতো টিসিবির ট্রাকে পাওয়া যাবে। প্রশ্ন হলো—এই পদক্ষেপ কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয় এবং তা বাজারের ভারসাম্য আনতে কতটা সফল হয়।
এম আর এম – ১৫৬২,Signalbd.com