জাতীয়

সারাদেশে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত ১১ জন

Advertisement

সংক্রমণের হার ৩.২৯ শতাংশ, এ বছর মোট শনাক্ত ৬৪৩ জন; মৃত্যু হয়নি কোনো

বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তবে সান্ত্বনার বিষয় হলো, এই সময়ে ভাইরাসটিতে কারও মৃত্যু হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৬৪৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ ঘোষণা

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা জানিয়েছে, রবিবার (৬ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে সোমবার (৭ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মোট ৩৩৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষাগুলোর মধ্যে ১১টি নমুনায় কোভিড-১৯ পজিটিভ আসে। ফলে শনাক্তের হার দাঁড়ায় ৩ দশমিক ২৯ শতাংশ।

অধিদফতর আরও জানায়, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত করোনায় ২৪ জন মারা গেছেন। গত কয়েক মাস ধরে সংক্রমণের হার অপেক্ষাকৃত নিম্নমুখী হলেও সম্পূর্ণভাবে শূন্যে নামেনি। বিশেষ করে বর্ষাকালে সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ে বলে সতর্কতা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

করোনা সংক্রমণের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা শনাক্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও, মাঝে মাঝে হঠাৎ করে কিছু সংখ্যক রোগী শনাক্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ‘লো লেভেল ট্রান্সমিশন’-এর ইঙ্গিত দিতে পারে। যেহেতু নিয়মিত টেস্টের হারও কমে এসেছে, তাই প্রকৃত সংক্রমণের পরিসংখ্যান আরও বেশি হতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।

স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশ্লেষক ডা. মাহবুব রশীদ বলেন,

“কোভিড-১৯ পুরোপুরি চলে যায়নি। আমরা একটা ‘এনডেমিক ফেইজ’-এ প্রবেশ করেছি। রোগটি এখন মৌসুমি সর্দি-কাশির মতো আচরণ করছে। তাই হালকা উপসর্গ থাকলে ঘরে থাকা এবং মাস্ক পরা জরুরি।”

পূর্ববর্তী বছরের তুলনা: কোথায় দাঁড়িয়ে ২০২৫?

২০২০ সালে যখন প্রথম বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত হয়, তখন পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। চিকিৎসা ব্যবস্থা, আইসোলেশন, অক্সিজেন সংকট—সবকিছু মিলিয়ে দেশ এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তী বছরগুলোতে গণটিকাদান, সুরক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কমে আসে।

২০২১ সালের আগস্টে দেশে করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকে ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। ২০২৪ সাল পর্যন্ত শনাক্ত ও মৃত্যু শূন্যে নামলেও ২০২৫ সালে আবারও মাঝে মাঝে কিছু সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে, যা নতুন করে সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করেছে।

জনগণের করণীয়: কীভাবে নিরাপদ থাকবেন?

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই এই ধরণের লঘু সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব। যেমন:

  • হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু বা কনুই দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা
  • নিয়মিত হাত ধোয়া
  • হালকা জ্বর-সর্দিতে বাইরে না যাওয়া
  • বদ্ধ ও ভিড়পূর্ণ স্থানে মাস্ক পরা
  • উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত টেস্ট করানো

বিশেষ করে যাদের বয়স বেশি, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ রয়েছে — তাঁদের জন্য আরও বেশি সাবধানতা জরুরি।

টিকা ও বুস্টার ডোজের অগ্রগতি

স্বাস্থ্য অধিদফতরের টিকা সংক্রান্ত ডাটায় দেখা গেছে, দেশে ২০২১ থেকে শুরু করে মোট তিনটি ধাপে কোভিড টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ জনগণ ইতোমধ্যেই দুটি ডোজ এবং একটি বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন। তবে এখনও কিছু মানুষ রয়েছেন যারা বুস্টার ডোজ নেননি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বুস্টার ডোজ গ্রহণে অবহেলা হলে ভবিষ্যতে সংক্রমণ বাড়তে পারে। তাই নাগরিকদের দ্রুত দ্বিতীয় বা তৃতীয় ডোজ সম্পন্ন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও সতর্কতা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কোভিড-১৯ কে ২০২৩ সালের শেষ দিকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা প্রত্যাহার করলেও, ভাইরাসটি পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। এটি ভবিষ্যতেও ঘন ঘন মৌসুমি আকারে ফিরে আসতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, যদি আগামী মাসগুলোতে নমুনা পরীক্ষার হার বাড়ানো হয় এবং জনগণ সচেতন থাকে, তবে এই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে উদাসীনতা ও অবহেলা বড় বিপদের ইঙ্গিত দিতে পারে।

এক নজরে করোনার তথ্য (২০২৫ পর্যন্ত)

বিষয়সংখ্যা
২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত১১ জন
নমুনা পরীক্ষা৩৩৪টি
শনাক্তের হার৩.২৯%
এ বছরের মোট শনাক্ত৬৪৩ জন
এ বছরের মোট মৃত্যু২৪ জন
২০২০ থেকে মোট শনাক্ত২০,৫২,১৮৮ জন
২০২০ থেকে মোট মৃত্যু২৯,৫২৩ জন

সারসংক্ষেপ 

করোনাভাইরাস এখনও একেবারে নির্মূল হয়নি। বরং মাঝে মাঝে অল্পসংখ্যক সংক্রমণই প্রমাণ করে, ভাইরাসটি এখনও সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি, টিকা গ্রহণ এবং সচেতনতা অব্যাহত রাখাটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

তবে প্রশ্ন রয়ে গেল—আমরা কি আবারও অবহেলায় সেই পুরনো দুঃস্বপ্ন ডেকে আনছি না তো?

এম আর এম – ০২১২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button